বিদ্যুৎ নাকি জীবনের চাবিকাঠি? বিজ্ঞানীরা দিলেন চাঞ্চল্যকর তথ্য!

শিরোনাম: আদি প্রাণের রহস্য: জলীয় বাষ্পের ‘ক্ষুদ্র আলো’ কি জীবনের সূচনা করেছিল?

মহাবিশ্বের এই বিশালতায় প্রাণের উৎপত্তি কীভাবে হয়েছিল, সেই কৌতূহল মানুষের চিরন্তন। কোটি কোটি বছর আগে, পৃথিবীর বুকে যখন প্রাণের চিহ্ন দেখা যায়নি, তখন কি ঘটেছিল সেই রহস্য উন্মোচন করতে সম্প্রতি নতুন এক গবেষণা আলো ফেলেছে।

গবেষণায় জানা গেছে, জলীয় বাষ্পের মধ্যে উৎপন্ন হওয়া ক্ষুদ্র “আলো” বা ‘মাইক্রোলাইটনিং’-এর ঝলকানি সম্ভবত জীবনের প্রাথমিক উপাদান তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই এই বিষয়ে গবেষণা করছেন যে কীভাবে অজৈব পদার্থ থেকে জীবনের মৌলিক উপাদানগুলি তৈরি হয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে, অ্যামিনো অ্যাসিডের উৎপাদনে বিদ্যুতের ভূমিকা নিয়ে নতুন এই গবেষণাটি গুরুত্বপূর্ণ।

অ্যামিনো অ্যাসিডগুলি হল প্রোটিনের বিল্ডিং ব্লক, যা জীবনের জন্য অপরিহার্য।

যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক, ড. রিচার্ড জারের নেতৃত্বে একটি দল ১৯৫৩ সালের একটি বিখ্যাত পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে নতুন পরীক্ষা চালান। সেই সময়ে, বিজ্ঞানীরা আদিম পৃথিবীর পরিবেশ তৈরি করে মিথেন, অ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন এবং জলীয় বাষ্পের মিশ্রণে বিদ্যুৎপ্রবাহের মাধ্যমে অ্যামিনো অ্যাসিড তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

নতুন গবেষণায়, বিজ্ঞানীরা সেই পরীক্ষাগুলিকেই আরও সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাঁরা জলীয় বাষ্পের মধ্যে এক মাইক্রন থেকে ২০ মাইক্রন আকারের জল কণাগুলির মধ্যে সৃষ্ট “মাইক্রোলাইটনিং”-এর ঝলকানি বিশ্লেষণ করেন।

তাঁদের পরীক্ষাগারে, তাঁরা অ্যামোনিয়া, কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন এবং নাইট্রোজেন গ্যাসের মিশ্রণে জলীয় বাষ্প তৈরি করেন। এরপরে, তাঁরা উচ্চ গতির ক্যামেরার মাধ্যমে সেই বাষ্পের মধ্যে “মাইক্রোলাইটনিং”-এর ক্ষীণ ঝলকানিগুলি পর্যবেক্ষণ করেন।

পরীক্ষার ফলস্বরূপ, তাঁরা গ্লাইসিন এবং ইউরাসিলের মতো কার্বন-নাইট্রোজেন বন্ধনযুক্ত জৈব অণু খুঁজে পান। এই ফলাফলগুলি জীবনের উৎপত্তির প্রাথমিক পর্যায়ে “মাইক্রোলাইটনিং”-এর সম্ভাব্য ভূমিকা সম্পর্কে ধারণা দেয়।

ড. জারে ব্যাখ্যা করেন, “আমরা নতুন কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া আবিষ্কার করিনি। বরং, ১৯৫৩ সালে মিলার এবং উরের করা পরীক্ষাটিই পুনরায় তৈরি করেছি।” তাঁর মতে, এই পরীক্ষায় নতুনত্ব হল, জলীয় বাষ্পের ক্ষুদ্র কণাগুলির মধ্যে “মাইক্রোলাইটনিং”-এর সৃষ্টি এবং এর মাধ্যমে রাসায়নিক পরিবর্তনগুলি পর্যবেক্ষণ করা।

তবে, জীবনের উৎপত্তি সম্পর্কে এটিই একমাত্র তত্ত্ব নয়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, আদিম পৃথিবীর গভীর সমুদ্রের তলদেশে অবস্থিত হাইড্রোথার্মাল ভেন্টেও জীবনের উপাদান তৈরি হতে পারে।

আবার, কোনো কোনো বিজ্ঞানীর মতে, প্রাণের মৌলিক উপাদানগুলি হয়তো পৃথিবীর বাইরে, মহাকাশে তৈরি হয়েছিল এবং উল্কা বা ধূমকেতুর মাধ্যমে পৃথিবীতে এসেছিল।

এই বিষয়ে এখনো অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বিজ্ঞানীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে, “মাইক্রোলাইটনিং”-এর মাধ্যমে অ্যামিনো অ্যাসিড তৈরির এই নতুন ধারণা জীবনের উৎপত্তির রহস্য উন্মোচনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।

এই গবেষণা আমাদের জানাচ্ছে, প্রাণের সূচনা সম্ভবত জলের মতোই সাধারণ কিছু ঘটনার মধ্য দিয়ে হয়েছিল।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *