ইউক্রেনে একটি ‘আশ্বস্তি বাহিনী’ পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে দ্বিধা বাড়ছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির প্রেক্ষাপটে এই বাহিনী গঠনের আলোচনা চললেও, বাস্তবে তা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কারণে এই পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁসহ ইউরোপীয় নেতারা ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জানানোর অঙ্গীকার করেছেন। কিন্তু তাদের নেওয়া পদক্ষেপগুলো ধীরে চলায়, বিষয়টি এখন বেশ জটিল রূপ নিয়েছে। শুরুতে এই বাহিনী ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে পরিচিত হওয়ার কথা থাকলেও, বর্তমানে এটিকে ‘আশ্বস্তি বাহিনী’ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, এই বাহিনী ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে সরাসরি অংশ নেবে না। তবে এর কর্মপরিধি কেমন হবে, কতজন সেনা সদস্য থাকবেন এবং তাদের অবস্থান কোথায় হবে, সে বিষয়ে এখনো বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। ফরাসি ও ব্রিটিশ সামরিক কর্মকর্তাদের ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এসব বিষয় চূড়ান্ত করতে বলা হয়েছে।
সামরিক পরিভাষায়, এখন সময় এসেছে ‘অপারেটিং কনসেপ্ট’ বা কর্ম-পরিকল্পনা তৈরি করার। এই বাহিনী কী ধরনের হুমকির সম্মুখীন হতে পারে? তাদের যুদ্ধ পরিচালনার নিয়মাবলি কেমন হবে? এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এতে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ সীমিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা পরিকল্পনাকে আরও বিলম্বিত করতে পারে।
ইউক্রেনের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রিই জ্যাগরোদনিউকের মতে, উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত। তাঁর মতে, ইউক্রেনের রাশিয়ার সঙ্গে ১০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। তাই ব্রিটিশ বা ফরাসি সেনাদের সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণের মতো ঝুঁকি নেওয়া কঠিন।
জ্যাগরোদনিউকের মতে, যদি ইউরোপীয় দেশগুলো শুধু কিয়েভে ১০ হাজার সেনা পাঠায়, তবে তা রাশিয়ার হিসাব-নিকাশে কোনো পরিবর্তন আনবে না। বরং এর ফলে ইউরোপ দুর্বল হয়ে পড়বে। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়া হয়তো ব্রিটিশ ও ফরাসি সৈন্যদের রাজধানীতে আটকে রেখে অন্য কোনো স্থানে হামলা চালাতে পারে, যা তাদের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করবে।
লন্ডনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটে’র (RUSI) একটি প্রতিবেদনে জ্যাগরোদনিউকের পরামর্শ হলো, স্থলসেনা পাঠানোর পরিবর্তে আকাশপথে সহায়তা করা যেতে পারে। এর অর্থ হলো, ব্রিটিশ, ফরাসি এবং অন্যান্য দেশের যুদ্ধবিমান ইউক্রেনে মোতায়েন করা এবং আকাশপথে রাশিয়ার হামলা প্রতিহত করা।
এমনকি যদি ইউরোপ কেবল পশ্চিমাঞ্চলে আকাশ সুরক্ষার ব্যবস্থা করে, তাহলেও ইউক্রেন তার সেনাদের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার করতে পারবে। আকাশপথে সহায়তা দেওয়াও ইউরোপের জন্য একটি বড় পদক্ষেপ হবে। তবে স্থল বাহিনী পাঠালে যে ঝুঁকি তৈরি হতো, তা হয়তো এখানে কম হবে।
অন্যদিকে, ইউরোপকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। কোনো ঘোষণা দেওয়ার আগে জনমতকে সেভাবে প্রস্তুত করতে হবে। বাহিনী মোতায়েনের ফলে ইউরোপের ভাবমূর্তি কেমন হবে, তা নির্ভর করবে তারা আগে যা বলেছিল, তার সঙ্গে বাস্তবতার কতটুকু মিল রয়েছে। যদি দেখা যায়, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তারা কাজ করতে পারছে না, তবে কেবল ইউক্রেন নয়, পুতিন এবং ট্রাম্পও ইউরোপকে দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত করতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন