বার্সেলোনায় পর্যটকদের উপর চরম প্রতিশোধ! শহরটিতে কি ভয়ঙ্কর বিপদ?

বার্সেলোনার পর্যটন সংকট: অতিরিক্ত পর্যটনে অতিষ্ঠ শহর। ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত স্প্যানিশ শহর বার্সেলোনা, যা একসময় তার মনোমুগ্ধকর স্থাপত্য, সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রার জন্য সারা বিশ্বে পরিচিত ছিল, আজ পর্যটকদের ভিড়ে জর্জরিত।

একদিকে যেমন পর্যটন এখানকার অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তেমনি অন্যদিকে এর বাসিন্দারা অতিরিক্ত পর্যটনের কারণে তাদের জীবনযাত্রার মান নিয়ে উদ্বিগ্ন। সম্প্রতি শহরের স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে পর্যটকদের প্রতি অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

পর্যটকদের আগমন বার্সেলোনার অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এখানকার পর্যটন শিল্প শহরের অর্থনীতির প্রায় ১৪% যোগান দেয় এবং প্রায় দেড় লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।

কিন্তু অতিরিক্ত পর্যটনের কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে, আবাসন সংকট একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পর্যটকদের জন্য স্বল্পমেয়াদী ভাড়ার ব্যবস্থা, যেমন অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া, স্থানীয়দের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসনের সুযোগ হ্রাস করছে। গত এক দশকে দীর্ঘমেয়াদী ভাড়ার অ্যাপার্টমেন্টের দাম প্রায় ৬৮% বেড়েছে।

বার্সেলোনার মেয়র জানিয়েছেন, পর্যটকদের আগমন বন্ধ করা যাবে না, তবে এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। পর্যটকদের কাছ থেকে আদায় করা ট্যাক্স দ্বিগুণ করার একটি প্রস্তাবনা এসেছে, যা বর্তমানে জনপ্রতি প্রায় ১৬ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১,৮০০ টাকা)।

এই ট্যাক্সের অর্থ আবাসনের সমস্যা সমাধানে ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম হল সাগ্রাদা ফ্যামিলিয়া (Sagrada Familia) এবং পার্ক গুইয়েল (Park Güell)। এই স্থানগুলোতে টিকিট কাটার জন্য অনলাইন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে, যা ভিড় নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করছে।

এছাড়া, লা রামবলা (La Rambla) সহ জনবহুল স্থানগুলোতে মানুষের চলাচল নিরীক্ষণের জন্য সেন্সর বসানো হয়েছে।

পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা বলছেন, বার্সেলোনার আকর্ষণ এখনো অটুট আছে। তবে শহরের কিছু অংশে, যেমন লা রামবলা এবং এর আশেপাশে, পর্যটকদের ভিড় স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

পর্যটন শিল্পের বিকাশের পেছনে বার্সেলোনার ১৯৯২ সালের অলিম্পিক গেমসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। অলিম্পিকের পর শহরটিতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়, যা পর্যটকদের কাছে এর আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দেয়।

বার্সেলোনার এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হতে পারে। কক্সবাজার অথবা সুন্দরবনের মতো স্থানগুলোতেও পর্যটকদের আগমন বাড়ে, যা সেখানকার পরিবেশ এবং স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রার ওপর প্রভাব ফেলে।

বার্সেলোনার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, বাংলাদেশ সরকার পর্যটনের সুফলগুলো বজায় রেখে কীভাবে পরিবেশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অধিকার রক্ষা করা যায়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *