ক্যানসারে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে যারা রোগের বিরুদ্ধে জয়ী হয়, তাদের অনেকেরই ভবিষ্যতে বাবা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। চিকিৎসা পদ্ধতির কারণে তারা বন্ধ্যাত্বের শিকার হন।
সম্প্রতি, এমন একদল ক্যান্সার জয়ীর জন্য নতুন একটি চিকিৎসা পদ্ধতির পরীক্ষা শুরু হয়েছে, যা তাদের প্রজনন ক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে পারে।
এই পদ্ধতিতে শুক্রাণু তৈরি করতে সক্ষম স্টেম সেল প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ পিটসবার্গ মেডিকেল সেন্টারের একদল গবেষক এই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাটি পরিচালনা করছেন।
তাদের তত্ত্বাবধানে, শৈশবে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া একজন পুরুষ, জাইওয়েন হসু, প্রথমবারের মতো শুক্রাণু উৎপাদনকারী স্টেম সেল প্রতিস্থাপন করেছেন। ১১ বছর বয়সে হসুর পায়ে ক্যান্সার ধরা পড়েছিল।
কেমোথেরাপির কারণে তার বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি ছিল। চিকিৎসকরা সেই সময় তার অণ্ডকোষ থেকে কোষ সংরক্ষণ করেন, যা ভবিষ্যতে তার প্রজনন ক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে কাজে লাগতে পারে।
বর্তমানে ২৬ বছর বয়সী হসু, এই চিকিৎসা পদ্ধতির পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য সম্মতি দেন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই গবেষণা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং সাফল্যের বিষয়ে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।
হসু জানান, তিনি ফলাফল জানার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশই রোগমুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পায়।
কিন্তু কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশনের কারণে তাদের মধ্যে প্রতি তিনজনের মধ্যে একজনের বন্ধ্যাত্ব দেখা যায়।
সাধারণত, বয়ঃসন্ধির আগে ক্যান্সার ধরা পড়লে শুক্রাণু বা ডিম্বাণু সংরক্ষণের সুযোগ থাকে না, কারণ তখনো তারা পরিপক্ক শুক্রাণু বা ডিম্বাণু তৈরি করতে শুরু করে না।
গবেষকরা জানিয়েছেন, ছেলেদের অণ্ডকোষে জন্ম থেকেই স্টেম সেল থাকে।
বয়ঃসন্ধিকালে টেস্টোস্টেরন হরমোনের প্রভাবে এই কোষগুলো শুক্রাণু তৈরি করতে শুরু করে।
পিটসবার্গের গবেষক কাইল অরউইগ-এর নেতৃত্বে একটি দল দীর্ঘদিন ধরে এই স্টেম সেল সংরক্ষণ এবং তা থেকে শুক্রাণু তৈরির চেষ্টা করছেন।
২০১১ সাল থেকে তারা প্রায় ১০০০ বালকের অণ্ডকোষ থেকে টিস্যু সংগ্রহ করে তা সংরক্ষণ করেছেন।
২০১৯ সালে, অরউইগ-এর দল একটি বানরের উপর এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে সফল হয়।
সংরক্ষিত টিস্যু ব্যবহার করে তারা একটি সুস্থ বানরের জন্ম দিতে সক্ষম হন। এরপর ২০২৩ সালে, হসুর শরীরে এই কোষ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে মানুষের উপর পরীক্ষা শুরু হয়।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে হসুর শরীরে স্টেম সেল প্রতিস্থাপন করা হয়েছে এবং এখন তারা ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছেন।
বেলজিয়ামের গবেষকরাও একই ধরনের একটি পরীক্ষা চালাচ্ছেন।
তারা ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে যাদের অণ্ডকোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের টিস্যু প্রতিস্থাপন করেছেন।
মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির অনকোফার্টিলিটি কনসোর্টিয়ামের পরিচালক ড. মাহমুদ সালামা জানিয়েছেন, মেয়ে শিশুদের ক্ষেত্রেও একই ধরনের গবেষণা চলছে, যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত ডিম্বাশয়ের টিস্যু প্রতিস্থাপনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
হসু মনে করেন, এই পরীক্ষা সফল হোক বা না হোক, এটি ভবিষ্যতে এই ধরনের গবেষণার জন্য নতুন পথ তৈরি করবে।
তিনি তার বাবা-মাকে ধন্যবাদ জানান, যারা বহু বছর আগে তার চিকিৎসার সময় এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
তথ্যসূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস