**এইচ অ্যান্ড এম-এর নতুন পদক্ষেপ: মডেলদের ডিজিটাল প্রতিরূপ তৈরিতে উদ্বেগে ফ্যাশন জগৎ**
ফ্যাশন জগতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার বাড়ছে, আর এর সঙ্গে বাড়ছে শ্রমিকদের কর্মসংস্থান নিয়ে উদ্বেগ। সম্প্রতি, বিশ্বখ্যাত পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এইচ অ্যান্ড এম তাদের মডেলদের ‘ডিজিটাল প্রতিরূপ’ তৈরি করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
এই খবর প্রকাশ্যে আসার পরেই ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা।
এইচ অ্যান্ড এম জানিয়েছে, তারা এ বছর তাদের মডেলদের ৩০টি ‘ডিজিটাল টুইন’ তৈরি করবে।
যদিও এই অবতারগুলো কীভাবে ব্যবহার করা হবে, সে বিষয়ে তারা এখনো বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
তবে, প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, এই উদ্যোগে তারা মডেল এজেন্সি এবং মডেলদের সঙ্গে একত্রে কাজ করছে এবং সবকিছু ‘দায়িত্বপূর্ণ উপায়ে’ করার চেষ্টা করবে।
এইচ অ্যান্ড এম-এর পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, মডেলরা তাদের ডিজিটাল প্রতিরূপের মালিক হবেন এবং তারা অন্য যেকোনো ব্র্যান্ডের হয়ে কাজ করতে পারবেন ও প্রতিটি কাজের জন্য পারিশ্রমিক পাবেন।
তবে, যুক্তরাজ্যের পারফর্মিং আর্টস ও বিনোদন বিষয়ক ট্রেড ইউনিয়ন ‘ইকুইটি’-র সাধারণ সম্পাদক পল ডব্লিউ ফ্লেমিং এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও একে পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করেন।
তিনি মনে করেন, এই ধরনের সিদ্ধান্তের সঙ্গে শ্রমিক অধিকার রক্ষার জন্য আইনি কাঠামো তৈরি করা জরুরি।
এআই-এর উন্নতি নিয়ে প্রতিযোগিতা ভালো, তবে মুনাফা বাড়াতে গিয়ে শ্রমিকদের অধিকার খর্ব করা উচিত নয়। কারণ, মানুষের শ্রম ও শিল্পকর্ম ছাড়া এআই-এর কোনো অস্তিত্ব নেই, তাই সৃজনশীলতার কেন্দ্রবিন্দুতে মানুষকেই রাখতে হবে।”
এইচ অ্যান্ড এম-এর এই ঘোষণার পর ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন, যেখানে বহু কর্মীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
বিশেষ করে, মডেল এবং অন্যান্য শিল্পী, যেমন মেকআপ আর্টিস্ট ও হেয়ার স্টাইলিস্টদের চাকরি হারানোর সম্ভবনা বাড়ছে।
নিউ ইয়র্ক-ভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ‘মডেল অ্যালায়েন্স’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও মডেল কর্মী সারা জিফ বলেছেন, “ডিজিটাল রেপ্লিকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে উপযুক্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা না থাকলে আমরা উদ্বিগ্ন।”
তিনি আরও যোগ করেন, “যে ইন্ডাস্ট্রিতে শ্রমিকদের অধিকার বরাবরই উপেক্ষিত হয়েছে, সেখানে এইচ অ্যান্ড এম-এর এই নতুন উদ্যোগ সম্মতি ও ক্ষতিপূরণ বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি করে।
একই সঙ্গে, এর মাধ্যমে ফ্যাশন জগতের অনেক কর্মীর চাকরি হারানোর সম্ভাবনাও রয়েছে।”
এইচ অ্যান্ড এম-ই প্রথম নয়, যারা এই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে।
এর আগে, জিন্স প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান লেভি স্ট্রাউস অ্যান্ড কোং-ও এআই-নির্মিত মডেল ব্যবহার করার ঘোষণা দিয়েছিল।
যদিও সমালোচনার মুখে তারা পরে জানায়, তারা সরাসরি ফটোশুটের পরিকল্পনা বাতিল করেনি।
গত বছর, স্প্যানিশ ব্র্যান্ড ম্যাংগো তাদের নতুন একটি সংগ্রহের প্রচারের জন্য সম্পূর্ণ এআই-নির্মিত একটি ক্যাম্পেইন তৈরি করেছিল।
বর্তমানে, এআই-নির্মিত ইনফ্লুয়েন্সার ও মডেলদের ব্যবহার বাড়ছে।
এমনকি, গত বছর বিশ্বে প্রথম এআই সুন্দরী প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
পোশাক শিল্পে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, ফলে শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
একই সঙ্গে, শ্রমিক অধিকার এবং ন্যায্য মজুরির বিষয়টিও বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন