সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে আজকাল স্বাস্থ্য ও সুস্বাস্থ্যের ধারণা নিয়ে নানা ধরনের উন্মাদনা প্রায়ই চোখে পড়ে। ওজন কমানো থেকে শুরু করে নিমিষেই আকর্ষণীয় ফিগার পাওয়ার প্রতিশ্রুতি—এসব চ্যালেঞ্জের ঘনঘটা দেখে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, এগুলো কতটা নির্ভরযোগ্য?
শরীরের যত্ন নেওয়ার নামে এমন সব কঠিন পথ বেছে নেওয়ার আগে আমাদের একটু সতর্ক হওয়া দরকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এইসব চ্যালেঞ্জের আসল রূপ অনেক সময়েই আমাদের কল্পনার থেকে আলাদা হয়।
ইন্টারনেটে চোখ রাখলে দেখা যায়, শরীরের গঠন অথবা লাইফস্টাইল পরিবর্তনের জন্য অনেকেই নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করছেন। এইসব চ্যালেঞ্জগুলো হয়তো তাৎক্ষণিক ফল দেয়, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তা শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
এমন অনেক দৃষ্টান্ত আছে যেখানে অল্প সময়ে দ্রুত ফল পাওয়ার লোভে মানুষ স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের পরিবর্তে কঠিন পথ বেছে নেয়। উদাহরণস্বরূপ, কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই ম্যারাথন দৌড়ানোর মতো কঠিন চ্যালেঞ্জ নেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
আবার, দ্রুত ওজন কমানোর জন্য কঠোর ডায়েট করার মতো ঘটনাও ঘটে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের চ্যালেঞ্জগুলো মূলত আমাদের মধ্যে থাকা দ্রুত পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা থেকে জন্ম নেয়।
আমরা নিজেদের প্রমাণ করতে অথবা অন্যদের দেখাতে চাই যে আমরাও পারি। কিন্তু এই ধরনের চ্যালেঞ্জগুলো সব সময় টেকসই হয় না।
বরং, এতে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. থমাস কারান মনে করেন, “আমরা যখন নিজেদের দুর্বল মনে করি, তখন এই চ্যালেঞ্জগুলো আমাদের কাছে ভালো কিছু করার সুযোগ হিসেবে আসে।”
সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে, যখন সবাই নিজেদের সেরাটা তুলে ধরতে চায়, তখন এই ধরনের চ্যালেঞ্জগুলো আরও বেশি জনপ্রিয়তা পায়। তবে, অন্যের সাফল্যের সঙ্গে নিজের তুলনা করলে হতাশা আসতেই পারে।
ড. কারান আরও বলেন, “এগুলো এক ধরনের কল্পনাবিলাস, যা আমাদের মধ্যে ক্রমাগত অসন্তুষ্টির জন্ম দেয়।” বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারীদের ক্ষেত্রে এই ধরনের চ্যালেঞ্জগুলো আরও বেশি ক্ষতিকর হতে পারে।
কারণ, তাঁদের প্রায়ই সমাজের চাপ এবং সৌন্দর্যের কিছু অবাস্তব ধারণার সঙ্গে লড়তে হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্বাস্থ্য বিষয়ক যেকোনো তথ্যের ক্ষেত্রে আমাদের সচেতন হতে হবে।
কোনো পরামর্শ গ্রহণ করার আগে, যিনি পরামর্শ দিচ্ছেন, তাঁর উদ্দেশ্য কী, তা খতিয়ে দেখা দরকার। উদাহরণস্বরূপ, কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি যদি কোনো পণ্য বিক্রি করার জন্য কোনো পরামর্শ দেন, তবে তাঁর ব্যক্তিগত লাভের সম্ভাবনা থাকে।
তাই, কোনো চ্যালেঞ্জ বা পণ্য চেষ্টা করার আগে ভালোভাবে গবেষণা করা এবং বিভিন্ন মতামত নেওয়া উচিত। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
তাহলে, সুস্থ থাকার সঠিক উপায় কী?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চরম পদক্ষেপের পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস তৈরি করা বেশি জরুরি। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য ছোট ছোট পরিবর্তন আনা যেতে পারে।
যেমন, প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সবজি যোগ করা, শস্যজাতীয় খাবার গ্রহণ করা এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা। এছাড়া, ব্যায়াম, যোগা বা খেলাধুলার মতো শারীরিক কার্যকলাপের মাধ্যমে শরীরকে সচল রাখা যেতে পারে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন যেন আনন্দের হয়, কোনো চাপ সৃষ্টি না করে। স্বাস্থ্য মানে শুধু ওজন কমানো বা একটি নির্দিষ্ট শারীরিক গঠন তৈরি করা নয়।
বরং, এটি মানসিক শান্তির সঙ্গে জড়িত। তাই, অন্যের সঙ্গে নিজেদের তুলনা না করে, বর্তমানের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
তথ্য সূত্র: সিএনএন