অস্ট্রেলিয়ায় আবিষ্কৃত ১৬ মিলিয়ন বছর পুরনো জীবাশ্ম, মাছের খাদ্যাভ্যাস উন্মোচন।
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি অঞ্চলে বিজ্ঞানীরা প্রায় ১ কোটি ৬০ লক্ষ বছর পুরনো, অর্থাৎ মিয়োসিন যুগের একটি জীবাশ্ম আবিষ্কার করেছেন।
এই আবিষ্কারটি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা একটি নতুন প্রজাতির মাছের সন্ধান পেয়েছেন এবং সেই মাছটির খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কেও জানতে পেরেছেন।
জীবাশ্মটির অসাধারণ সংরক্ষণের কারণে বিজ্ঞানীরা মাছটির শেষ খাবার সম্পর্কেও নিশ্চিত হতে পেরেছেন।
গবেষকরা এই নতুন মাছ প্রজাতিটির নাম দিয়েছেন *Ferruaspis brocksi*।
এটি একটি স্বাদু পানির মাছ ছিল, যা বিজ্ঞানীরা নিউ সাউথ ওয়েলসের ম্যাকগ্রাথস ফ্ল্যাট নামক স্থানে খুঁজে পেয়েছেন।
মাছটির জীবাশ্ম তৈরি হয়েছে গোয়েটাইট নামক একটি লৌহ সমৃদ্ধ খনিজ পদার্থের মধ্যে, যা মাছটিকে এত ভালোভাবে সংরক্ষণ করতে সাহায্য করেছে।
এই বিরল প্রক্রিয়ার কারণে গবেষকরা মাছটির শরীরের গঠন, নরম টিস্যু, পাকস্থলী এবং এমনকি এর গায়ের রঙের ধরন পর্যন্ত বিস্তারিতভাবে পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন।
ক্যানবেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক এবং ভাইরোলজিস্ট ড. মাইকেল ফ্রিস এক সাক্ষাৎকারে জানান, “ম্যাকগ্রাথস ফ্ল্যাটের জীবাশ্মগুলো পরীক্ষা করার সময় আমি এর বিস্তারিত সংরক্ষণে খুবই বিস্মিত হয়েছি।
একটি জীবাশ্ম মাছের রং কেমন ছিল, তা বলা সত্যিই খুব বিরল একটি ঘটনা।”
এই আবিষ্কারের ফলে, বিজ্ঞানীরা অস্ট্রেলিয়ায় অস্মেরিফর্মিস (Osmeriformes) বর্গের মাছ, যেমন – স্মেল্ট এবং গ্রে-লিং-এর প্রাচীন অস্তিত্বের প্রথম বিস্তারিত প্রমাণ খুঁজে পেয়েছেন।
এতদিন পর্যন্ত, বিজ্ঞানীদের কাছে এই অঞ্চলে এই মাছগুলোর আগমন সম্পর্কে তেমন কোনো জীবাশ্ম প্রমাণ ছিল না।
নতুন এই আবিষ্কারটি এখানকার প্রাচীন বাস্তুতন্ত্র সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা দেয়।
গবেষকরা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করে *Ferruaspis brocksi* মাছটির পাকস্থলীর উপাদান বিশ্লেষণ করেছেন।
তারা দেখেছেন, মাছটি প্রধানত ফ্যান্টম মিডজ লার্ভা (এক প্রকার প্রায় স্বচ্ছ পোকামাকড়), পোকামাকড়ের ডানা এবং ছোট আকারের শামুক জাতীয় প্রাণী খেত।
এমোরি ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. অ্যান্থনি মার্টিন, যিনি এই গবেষণায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন না, তিনি বলেন, “মাছগুলোর খাদ্যাভ্যাস জানার মাধ্যমে আমরা সেই সময়ের খাদ্য শৃঙ্খল এবং খাদ্য জাল সম্পর্কে ধারণা পেতে শুরু করি।”
আশ্চর্যের বিষয় হলো, মাছটির একটি নমুনার লেজের পাখায় একটি স্বাদু পানির ঝিনুক পাওয়া গেছে।
ফ্রিসের মতে, এই ধরনের ঝিনুক সাধারণত যে পরিবেশে পাওয়া যায়, সেখানে *Ferruaspis brocksi* মাছটি ছিল না।
তাই ধারণা করা হচ্ছে, সম্ভবত কাছাকাছি কোনো নদী থেকে পরজীবীর মাধ্যমে মাছটির লেজে এই ঝিনুকটি লেগেছিল।
মাছটির পাকস্থলীর উপাদান বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা কেবল তার খাদ্যই নয়, বরং সে কখন খেত, সে সম্পর্কেও জানতে পেরেছেন।
ফ্রিস আরও বলেন, “অধিকাংশ *Chaoborus* (ফ্যান্টম মিডজ লার্ভা) মাছের সাথে একসাথে বাস করে না এবং যারা করে, তারা দিনের বেলায় শিকারি মাছের হাত থেকে বাঁচতে গভীর পানিতে আশ্রয় নেয়।
সম্ভবত, *Ferruaspis brocksi* রাতের বেলায় *Chaoborus* লার্ভা শিকার করত।
এই গবেষণায় মাছটির শরীরের রঙের ধরন সম্পর্কেও জানা গেছে।
বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, মাছটির শরীর ছিল হালকা এবং সরু।
তারা আরও জানতে পেরেছেন, মাছটির শরীরের উপরের অংশ ছিল গাঢ় এবং পেটের দিকটা ছিল হালকা রঙের।
শরীরের দু’পাশে দুটি ডোরাকাটা দাগ ছিল।
ফ্রিসের মতে, এই ধরনের রঙের বিন্যাস সম্ভবত ঝাঁক বেঁধে থাকার ইঙ্গিত দেয়, যা শিকারিদের থেকে বাঁচতে সাহায্য করত।
বর্তমানে নিউ সাউথ ওয়েলস অঞ্চলে সমভূমি এবং মালভূমি দেখা গেলেও, মিয়োসিন যুগে এখানকার পরিবেশ ছিল সবুজ বনভূমি দ্বারা পরিবেষ্টিত।
গ্রেট ডিভাইডিং রেঞ্জের পশ্চিমে *Ferruaspis brocksi* মাছের সন্ধান পাওয়া গেছে, যা প্রমাণ করে যে এই প্রজাতিটি সম্ভবত সারা জীবন স্বাদু পানিতেই বাস করত।
ড. ফ্রিস বলেন, “যদিও এই গবেষণাটি একটি মাছ প্রজাতিকে নিয়ে, তবে এটি সেই অঞ্চলের বৃহত্তর বাস্তুতন্ত্রের একটি অংশ, যা আমরা জীবাশ্ম খননের মাধ্যমে ধীরে ধীরে উন্মোচন করছি।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন