কোমর ব্যথার রোগীদের জন্য সুখবর! নতুন ওষুধ আনছে স্বস্তি?

কোমর ব্যথার চিকিৎসায় নতুন দিশা দেখাচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক নির্ভর ওষুধ?

বিশ্বজুড়ে কোমর ব্যথার সমস্যায় জর্জরিত মানুষের জন্য সুখবর! সম্প্রতি, একটি নতুন ওষুধের পরীক্ষা চালানো হয়েছে, যা প্রচলিত ব্যথানাশক ওষুধের পরিবর্তে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে কোমর ব্যথার চিকিৎসায় নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারে।

‘পার্সিকা ফার্মাসিউটিক্যালস’ নামক একটি ব্রিটিশ বায়োটেক সংস্থা এই ওষুধটি তৈরি করেছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘PP353’। প্রাথমিক গবেষণায় দেখা গেছে, এটি কোমর ব্যথার চিকিৎসায় উল্লেখযোগ্য ফল দিতে সক্ষম।

কোমর ব্যথার কারণ অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রেই এর মূল কারণ হল মেরুদণ্ডের ডিস্কের চারপাশে সংক্রমণ। ‘PP353’ ওষুধটি তৈরি করা হয়েছে তিনটি উপাদানের সমন্বয়ে: অ্যান্টিবায়োটিক ‘লাইনেজোলিড’, কন্ট্রাস্ট এজেন্ট ‘আইওহেক্সল’ এবং একটি তাপ সংবেদনশীল জেল। এই ওষুধটি সরাসরি কোমরের নিচের অংশে ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রবেশ করানো হয়, যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে।

প্রাথমিক পর্যায়ে, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের ছয়টি এনএইচএস হাসপাতালের সহযোগিতায় ৪৪ জন রোগীর উপর এই ওষুধের পরীক্ষা চালানো হয়। পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ রোগীর ব্যথা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে এবং তাঁদের দৈনন্দিন কাজকর্মের ক্ষমতাও বেড়েছে।

চিকিৎসকরা এই ওষুধটিকে ‘গেমচেঞ্জার’ হিসেবে অভিহিত করেছেন, বিশেষ করে কোমর ব্যথার সেই রোগীদের জন্য, যাদের ব্যথার কারণ হল সংক্রমণ।

চিকিৎসক ও এই পরীক্ষার প্রধান গবেষক ড. শিব ত্রিপাঠীর মতে, ওষুধটি অনুমোদন পেলে এবং বাজারে এলে তা দীর্ঘমেয়াদী কোমর ব্যথার চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের মতোই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কারণ, এর মাধ্যমে অনেক রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন এবং তাঁদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।

তবে, এখনও পর্যন্ত এই ওষুধটি সীমিত সংখ্যক রোগীর উপর পরীক্ষা করা হয়েছে। তাই, বাজারে আসার আগে এটিকে আরও অনেকগুলো পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পেতে হবে।

পরীক্ষার প্রধান সীমাবদ্ধতা হল, এটিতে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা কম ছিল। তাছাড়া, এই ওষুধ কতটা নির্ভরযোগ্য এবং নিরাপদ, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে আরও বিস্তারিত গবেষণা প্রয়োজন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কোমর ব্যথার চিকিৎসায় এই ধরনের উদ্ভাবন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বিশ্বে এই সমস্যা ব্যাপক হারে বাড়ছে।

বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের কারণে কোমর ব্যথার রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। বর্তমানে উপলব্ধ চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো সবার জন্য সমানভাবে কার্যকর নাও হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার বা দীর্ঘমেয়াদী ওষুধ সেবনের প্রয়োজন হয়।

তবে, লন্ডনের ইম্পেরিয়াল হেলথকেয়ার এনএইচএস ট্রাস্টের কনসালট্যান্ট রিউম্যাটোলজিস্ট ড. বেঞ্জামিন এলিস এই ওষুধের সম্ভাবনা নিয়ে কিছুটা সংশয় প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে, দীর্ঘমেয়াদী কোমর ব্যথার চিকিৎসায় আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা এখনো পর্যন্ত খুব বেশি সাফল্য পায়নি।

পার্সিকা ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান নির্বাহী স্টিভ রাস্টন জানিয়েছেন, তাঁদের গবেষণায় ভালো ফল পাওয়া গেছে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, শুধুমাত্র যুক্তরাজ্যেই প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ মানুষ এই ওষুধের মাধ্যমে উপকৃত হতে পারে। বিশ্বজুড়ে কোমর ব্যথার সমস্যা একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা, তাই এই ওষুধটি বিশ্বজুড়ে লাখো মানুষের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।

বর্তমানে, বাংলাদেশে কোমর ব্যথার চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি, ব্যথানাশক ওষুধ এবং কিছু সনাতন পদ্ধতির ব্যবহার হয়। ‘PP353’ যদি সফলভাবে আরও পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারে এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পায়, তবে এটি বাংলাদেশের রোগীদের জন্য একটি নতুন এবং কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি হতে পারে।

ভবিষ্যতে এই ওষুধটি বাজারে এলে, তা কোমর ব্যথার চিকিৎসায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। তবে, এর কার্যকারিতা এবং নিরাপত্তা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে আরও ব্যাপক গবেষণার প্রয়োজন।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *