মিয়ানমারে ভূমিকম্প: যুদ্ধের আগুনে যোগ হল ধ্বংসযজ্ঞ!

মায়ানমারে ভূমিকম্প: গৃহযুদ্ধ ও মানবিক বিপর্যয়ের মাঝে নতুন আঘাত।

গত শুক্রবার ৭.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে মায়ানমার। দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ের কাছে ছিল ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই ৬.৪ মাত্রার শক্তিশালী আফটারশক আঘাত হানে, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।

ভূমিকম্পের কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো স্পষ্ট না হলেও, ধ্বংসস্তূপের নিচে বহু মানুষের আটকা পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ভূমিকম্পের আগেই, মিয়ানমারে মানবিক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। দেশটির সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকেই সেখানে গৃহযুদ্ধ চলছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, এই গৃহযুদ্ধের কারণে ইতোমধ্যেই ৩০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

এছাড়া, মানবিক সহায়তা প্রয়োজন এমন মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ৮৬ লাখ।

২০২১ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি, অং সান সু চি’র নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। এরপর থেকেই দেশটিতে অস্থিরতা চলছে। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নির্বিচারে বেসামরিক নাগরিকদের উপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে।

এর ফলে, দেশের একটি বড় অংশ জুড়ে সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে।

সংকট আরও বাড়িয়ে তুলেছে আন্তর্জাতিক সহায়তা হ্রাস। সম্প্রতি, বিদেশি সহায়তা কর্মসূচির ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি সিদ্ধান্তের কারণে মিয়ানমারের শরণার্থীদের জন্য অনেক সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে থাইল্যান্ডের শরণার্থী শিবিরগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এক লাখেরও বেশি শরণার্থীর জীবন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।

খাদ্য সংকটও চরম আকার ধারণ করেছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (World Food Program – WFP) তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাস থেকে মিয়ানমারে খাদ্য সহায়তা কমানো হতে পারে। বর্তমানে দেশটির প্রায় ১ কোটি ৫২ লাখ মানুষ, যা মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি, তাদের ন্যূনতম খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে পারছে না।

এদের মধ্যে প্রায় ২৩ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্য সংকটে রয়েছে। বর্তমানে, ডব্লিউএফপি’র কাছে শুধুমাত্র ৩৫ হাজার অতি-দরিদ্র মানুষের জন্য সহায়তা করার মতো অর্থ রয়েছে।

স্বাস্থ্যখাতেও দেখা দিয়েছে চরম সংকট। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে নিযুক্ত মিয়ানমারের মানবাধিকার বিষয়ক পর্যবেক্ষক টম অ্যান্ড্রুজের মতে, সাহায্য কমে যাওয়ায় সেখানে যক্ষ্মা (Tuberculosis) ও এইচআইভি (HIV) রোগীদের ওষুধ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এছাড়া, প্রতিবন্ধী শিশুদের পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানিয়েছে, খাদ্য ও জল বিতরণেও তারা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।

ভূমিকম্প এবং গৃহযুদ্ধ – দুইয়ের মিলিত আঘাতে মিয়ানমারের পরিস্থিতি এখন অত্যন্ত নাজুক। দেশটির জনগণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য, চিকিৎসা ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা দরকার।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই কঠিন সময়ে মিয়ানমারের পাশে দাঁড়ানো উচিত।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *