যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে নাৎসিদের লুটের শিকার هنরি গিবসের চিত্রকর্ম, অবশেষে ফিরছে!

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিদের দ্বারা লুট হওয়া একটি চিত্রকর্ম, যা গত ৩১ বছর ধরে যুক্তরাজ্যের একটি সংগ্রহশালায় ছিল, অবশেষে ইহুদি এক শিল্প ব্যবসায়ীর পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

সপ্তদশ শতকের শিল্পী হেনরি গিবস-এর আঁকা ‘এনিয়াসের পরিবার ট্রয় নগরী থেকে পালাচ্ছে’ শীর্ষক এই চিত্রকর্মটি নাৎসিদের হাতে লুন্ঠিত হয়েছিল।

জানা গেছে, বেলজিয়ামের আন্তোয়ার্পে অবস্থিত স্যামুয়েল হার্টভেল্ড নামক এক ইহুদি শিল্পীর গ্যালারি থেকে এটি চুরি করা হয়।

১৯৪০ সালের মে মাসে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আট মাস পর, হার্টভেল্ডকে যখন তাঁর বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য করা হয়, সেই সময়েই এই ঘটনা ঘটে।

যুক্তরাজ্যের ‘স্পোলেশন অ্যাডভাইজরি প্যানেল’-এর (Spoliation Advisory Panel) সিদ্ধান্তের পর হার্টভেল্ডের প্রপৌত্র-প্রপৌত্রীদের কাছে এই চিত্রকর্মটি ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

এই প্যানেল যুক্তরাজ্যে থাকা নাৎসিদের লুন্ঠিত শিল্পকর্ম সংক্রান্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করে থাকে।

১৬৫৪ সালে আঁকা এই চিত্রকর্মটিতে ট্রয়ের পতন থেকে রক্ষা পেতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পালিয়ে যাওয়া ট্রোজান বীর এনিয়াসের গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

এনিয়াসের এই যাত্রা ইতালিতে গিয়ে শেষ হয়, যেখানে তিনি রোমানদের পূর্বপুরুষ হিসেবে পরিচিত হন।

ছবিতে এনিয়াসকে তাঁর পরিবারকে জ্বলন্ত শহর থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে দেখা যায়।

যুক্তরাজ্যের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী ক্রিস ব্রায়ান্ট (Chris Bryant) এই চিত্রকর্ম ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনাকে প্যানেলের ‘আদর্শ উদাহরণ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

তাঁর মতে, এর মাধ্যমে ‘নাৎসিদের দ্বারা লুন্ঠিত হওয়া পরিবারের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসগুলো ফিরিয়ে দিতে সাহায্য করা হয়েছে’।

সরকারিভাবে ২০০০ সালে এই স্বাধীন প্যানেলটি গঠিত হওয়ার পর থেকে তারা ২৩টি আবেদন পেয়েছে এবং এর মধ্যে ১৪টি শিল্পকর্ম তাঁদের আসল মালিকের উত্তরাধিকারীদের কাছে ফেরত দিয়েছে।

সাফল্যমণ্ডিত একজন শিল্প ব্যবসায়ী স্যামুয়েল হার্টভেল্ড (Samuel Hartveld) এবং তাঁর স্ত্রী ক্লারা মেইবুম (Clara Meibুম) আন্তোয়ার্প থেকে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান।

তাঁদের অনেক মূল্যবান জিনিস তখন সেখানেই রয়ে যায়।

হেনরি গিবসের এই চিত্রকর্মটি তাঁর গ্যালারিতে থাকা ৬৬টি শিল্পকর্মের মধ্যে অন্যতম ছিল।

হার্টভেল্ড দম্পতির ছেলে অ্যাডেলিন হার্টভেল্ড (Adelin Hartveld) বেলজিয়ামে থেকে যান এবং প্রতিরোধ আন্দোলনে যোগ দেন।

পরবর্তীতে নাৎসিদের হাতে তিনি ধরা পড়েন এবং নিহত হন।

হার্টভেল্ড ও তাঁর স্ত্রী কোনোমতে যুদ্ধ থেকে বাঁচলেও, তাঁদের আর কখনো চিত্রকর্মগুলোর সঙ্গে দেখা হয়নি।

জার্মান কর্তৃপক্ষ তাঁদের বেশিরভাগ চিত্রকর্ম লুট করে বিক্রি করে দেয়।

ধারণা করা হয়, এর কিছু বর্তমানে ইউরোপের বিভিন্ন গ্যালারিতে রয়েছে, যা হাত বদল হয়েছে কয়েকবার।

হেনরি গিবসের এই চিত্রকর্মটি ব্রাসেলসের ‘গ্যালারি জ্যান দে মেইয়ার’ (Galerie Jan de Maere) থেকে কিনেছিল ‘টেইট সংগ্রহশালা’ (Tate collection)।

হার্টভেল্ডের তিন প্রপৌত্র-প্রপৌত্রীর মধ্যে দুইজন তাঁদের মায়ের নামে গঠিত ‘সোনিয়া ক্লেইন ট্রাস্ট’-এর (Sonia Klein Trust) মাধ্যমে ২০২৪ সালের মে মাসে ক্ষতিপূরণের আবেদন করেন।

প্যানেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘স্যামুয়েল হার্টভেল্ডের প্রপৌত্র-প্রপৌত্রীদের এই চিত্রকর্ম পুনরুদ্ধারের আইনি ও নৈতিক অধিকার রয়েছে।

কারণ, তিনি নিজের দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন এবং তাঁর সম্পত্তি, বই ও শিল্পকর্ম ফেলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।

তাঁর গ্যালারির সম্পদ, লাইব্রেরি এবং চিত্রকর্মগুলো জাতিগত নিপীড়নের অংশ হিসেবে লুট করা হয়েছিল।’

প্যানেল আরও জানায়, টেইট এই দাবির বিরোধিতা করেনি এবং তাদের প্রতিক্রিয়া ছিল ‘খুবই সম্মানজনক’।

টেইটের পরিচালক মারিয়া বালশ (Maria Balshaw) বলেন, ‘এই শিল্পকর্মটি তাঁর সঠিক উত্তরাধিকারীদের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।

যদিও ১৯৯৪ সালে এটি কেনার সময় শিল্পকর্মটির উৎস সম্পর্কে বিস্তারিত অনুসন্ধান করা হয়েছিল, তবুও এর আগের মালিকানা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য তখন জানা যায়নি।’

সোনিয়া ক্লেইন ট্রাস্টের ট্রাস্টিরা বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে স্যামুয়েল হার্টভেল্ডের প্রতি নাৎসিদের নৃশংস অত্যাচারের বিষয়টি স্পষ্টভাবে স্বীকার করা হয়েছে।

সেইসঙ্গে, এই ‘লুণ্ঠিত’ চিত্রকর্মটি যে একজন ইহুদি বেলজিয়ান শিল্পী ও ব্যবসায়ী হার্টভেল্ডের ছিল, তাও প্রমাণিত হয়েছে।’

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *