মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন শুল্ক নীতির কারণে গাড়ি শিল্পের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা টেসলার (Tesla) ক্ষেত্রে প্রভাব কিছুটা কম হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কারণ হিসেবে জানা যাচ্ছে, টেসলার গাড়ির উৎপাদন প্রক্রিয়ার সিংহভাগই হয় আমেরিকায়।
সম্প্রতি, মার্কিন সরকার ঘোষণা করেছে যে তারা গাড়ির যন্ত্রাংশ এবং সম্পূর্ণ গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে চলেছে। এই সিদ্ধান্তটি আগামী এপ্রিল মাস থেকে কার্যকর হবে।
এর ফলে, বিদেশি গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলোর পাশাপাশি, এমন কিছু আমেরিকান কোম্পানিও ক্ষতির সম্মুখীন হবে, যাদের উৎপাদন প্রক্রিয়া অন্য দেশে বিস্তৃত।
তবে, টেসলার জন্য পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে ভিন্ন হতে পারে। Cars.com নামক একটি ওয়েবসাইটের আমেরিকান-মেড ইনডেক্স অনুযায়ী, টেসলা ২০১৮ সাল থেকে ‘সবচেয়ে বেশি আমেরিকান-নির্মিত’ গাড়ির স্বীকৃতি ধরে রেখেছে।
এই ইনডেক্সটি গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরি, অ্যাসেম্বলিংয়ের স্থান, ইঞ্জিন এবং ট্রান্সমিশনের উৎস এবং যুক্তরাষ্ট্রের কর্মী নিয়োগের মতো বিষয়গুলো বিবেচনা করে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, টেসলার গাড়ির বেশিরভাগ যন্ত্রাংশ আমেরিকায় তৈরি হওয়ার কারণে, এই শুল্ক নীতি তাদের ওপর সরাসরি বড় প্রভাব ফেলবে না।
উদাহরণস্বরূপ, জেনারেল মোটরস (General Motors)-এর মতো কিছু কোম্পানির মেক্সিকোতে কারখানা রয়েছে, যা তাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
যদিও টেসলার জন্য পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে অনুকূল, তবুও তারা একেবারে ক্ষতির বাইরে নয়। টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্ক (Elon Musk) নিজেই স্বীকার করেছেন যে, এই শুল্ক নীতির কারণে তাদের ওপরও কিছু প্রভাব পড়বে।
ন্যাশনাল হাইওয়ে ট্রাফিক সেফটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (National Highway Traffic Safety Administration) -এর তথ্য অনুযায়ী, টেসলার গাড়ির ২০ থেকে ২৫ শতাংশ যন্ত্রাংশ আমদানি করা হয়।
যদিও এর মধ্যে কত শতাংশ মেক্সিকো থেকে আসে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
বিশ্লেষকদের মতে, টেসলার জন্য এই শুল্ক নীতির কারণে সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ বছরে প্রায় ১.৬ বিলিয়ন ডলার হতে পারে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় হিসাব করলে বিশাল একটা অঙ্ক।
এর মূল কারণ হলো, টেসলার কিছু যন্ত্রাংশ মেক্সিকো থেকে আসে।
এই পরিস্থিতিতে, টেসলার জন্য একটি ইতিবাচক দিক হলো, তারা তাদের প্রতিযোগীদের তুলনায় কিছুটা সুবিধা পেতে পারে।
বিশেষ করে, ফোর্ড, জেনারেল মোটরস এবং স্টিলল্যান্টিসের মতো যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলোর তুলনায় টেসলা এক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবে।
কারণ, এই কোম্পানিগুলোর শ্রমিক ইউনিয়ন রয়েছে।
তবে, শুধু আমেরিকায় সুবিধা পেলেই চলবে না।
টেসলাকে ইউরোপ ও চীনের বাজারেও টিকে থাকতে হবে।
বর্তমানে, এই দুটি বাজারে টেসলার বিক্রি কিছুটা কমেছে।
যদি বাংলাদেশের কথা বলি, তাহলে দেখা যায়, এখানেও গাড়ির যন্ত্রাংশ এবং সম্পূর্ণ গাড়ির ওপর আমদানি শুল্কের প্রভাব রয়েছে।
শুল্ক বাড়লে গাড়ির দাম বাড়ে, যা ক্রেতাদের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়।
সব মিলিয়ে, মার্কিন শুল্ক নীতি টেসলার জন্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
অন্যদিকে, তাদের আমদানি করা যন্ত্রাংশের কারণে ক্ষতির সম্ভাবনাও রয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন