বৈদ্যুতিক গাড়ির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নিকোলার প্রতিষ্ঠাতা ট্রেভর মিলটনের সাজা মওকুফ করলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার হোয়াইট হাউস এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত মিলটনের কারাদণ্ডের মেয়াদ ছিল চার বছর। তার এই সাজা মওকুফের ফলে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া কয়েক’শ মিলিয়ন ডলার ফেরত দেওয়ার যে সম্ভাবনা ছিল, তা কার্যত বাতিল হয়ে গেল।
জানা গেছে, নির্বাচনের এক মাস আগেও মিলটন ও তার স্ত্রী ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচন তহবিলে ১৮ লাখ ডলারের বেশি অনুদান দিয়েছিলেন। ফেডারেল নির্বাচন কমিশন সূত্রে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
অভিযোগ ছিল, মিলটন তার কোম্পানির প্রযুক্তির সম্ভাবনাকে অতিরঞ্জিত করে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করেছিলেন। প্রসিকিউটরদের ভাষ্যমতে, একটি ট্রায়ালে প্রমাণ হয় মরুভূমির হাইওয়েতে একটি ট্রাকের ভিডিও দেখালেও সেটি ছিল অচল একটি মডেল, যা কেবল পাহাড় থেকে গড়িয়ে নামানো হয়েছিল।
মিলটনের বিরুদ্ধে যখন অভিযোগ আনা হয়, তখন তিনি কোনো প্রকার কারাদণ্ড ভোগ করেননি। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের পর মিলটন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান, তিনি প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের কাছে কৃতজ্ঞ।
তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সত্যের পক্ষে দাঁড়িয়ে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন এবং তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।
হোয়াইট হাউস মিলটনের ক্ষমার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও তাদের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত কোনো ঘোষণা ছিল না। শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পকে যখন মিলটনকে ক্ষমা করার কারণ জানতে চাওয়া হয়, তখন তিনি বলেন, অনেক লোক তাকে এই কাজটি করার জন্য সুপারিশ করেছিলেন।
ট্রাম্প আরও বলেন, সম্ভবত মিলটনকে এজন্য অভিযুক্ত করা হয়েছিল কারণ তিনি প্রেসিডেন্টকে সমর্থন করতেন।
ট্রাম্পের দাবি, মিলটন ‘কোনো ভুল করেননি’ এবং নিউইয়র্কের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্টের প্রসিকিউটররা ছিলেন ‘একটি নিষ্ঠুর দল’।
মিলটনের বিরুদ্ধে সিকিউরিটিজ জালিয়াতির মামলায় ট্রাম্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুই আইনজীবী তাকে সমর্থন করেছিলেন। তারা হলেন- মার্ক মুকাসে, যিনি ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং ব্র্যাড বন্ডি, যিনি ছিলেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডির ভাই।
এছাড়াও, শুক্রবার ট্রাম্প ওজি মিডিয়ার সহ-প্রতিষ্ঠাতা কার্লোস ওয়াটসনের সাজা কমিয়েছেন। আর্থিক ষড়যন্ত্রের মামলায় প্রায় ১০ বছরের কারাদণ্ডের জন্য তাকে কারাগারে যেতে হওয়ার কথা ছিল।
দায়িত্ব গ্রহণের পর ট্রাম্প তার ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা ব্যবহার করতে বেশি সময় নেননি। ক্ষমতা গ্রহণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ইউএস ক্যাপিটলে যারা দাঙ্গায় অংশ নিয়েছিল, তাদের প্রায় ১,৫০০ জনের রেকর্ড পরিষ্কার করে দেন।
এর পরের দিন, তিনি মাদক বিক্রির জন্য একটি আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়েবসাইট সিল্ক রোডের প্রতিষ্ঠাতা রস উলব্রিখটের ক্ষমা ঘোষণা করেন।
উল্লেখযোগ্য যে, একসময় ওয়াল স্ট্রিটের অন্যতম জনপ্রিয় কোম্পানি হিসেবে পরিচিত নিকোলা, পরবর্তীতে কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে এবং ফেব্রুয়ারিতে দেউলিয়া সুরক্ষার জন্য আবেদন করে।
মিলটনকে প্রতারণার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। প্রসিকিউটররা অভিযোগ করেছিলেন, মিলটন এমন একটি ট্রাক তৈরি করার মিথ্যা দাবি করেছিলেন, যা আসলে জেনারেল মোটরসের একটি পণ্য ছিল, যার ওপর নিকোলার লোগো লাগানো হয়েছিল।
নিকোলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, বিনিয়োগকারীদের কাছে তার ব্যবসার প্রস্তাব দেওয়ার সময় মিলটন ‘অতিরিক্ত কথা বলতে পছন্দ করতেন’।
২০২০ সালে জালিয়াতির অভিযোগের কারণে মিলটন পদত্যাগ করেন। এরপর নিকোলার শেয়ারের দাম কমতে শুরু করে। বিনিয়োগকারীরা বড় ক্ষতির শিকার হন।
কারণ, এমন খবর ছড়িয়ে পরেছিল যে কোম্পানিটি শূন্য-নির্গমন ১৮-চাকার ট্রাক তৈরি করেছে।
২০২১ সালে, নিকোলা এসইসির (সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন) বিরুদ্ধে আনা একটি দেওয়ানি মামলায় ১২৫ মিলিয়ন ডলার জরিমানা দিতে রাজি হয়। তবে, তারা কোনো ভুল স্বীকার করেনি।
মিলটনের ক্ষমা প্রসঙ্গে নিউইয়র্কের মার্কিন অ্যাটর্নি অফিসের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এই অফিসই মামলাটি পরিচালনা করছিল।
তখনকার শুনানিতে মার্কিন অ্যাটর্নি ড্যামিয়ান উইলিয়ামস বলেছিলেন, “ট্রেভর মিলটন বারবার বিনিয়োগকারীদের মিথ্যা বলেছেন—সোশ্যাল মিডিয়ায়, টিভিতে, পডকাস্টে এবং প্রিন্টে।
তবে আজকের এই রায় স্টার্ট-আপ কোম্পানি ও কর্পোরেট কর্মকর্তাদের সতর্কবার্তা দেয়—’ফেইক ইট টিল ইউ মেক ইট’ (যা নেই, তা আছে এমনটা দেখানো) জালিয়াতির কোনো অজুহাত হতে পারে না এবং যদি আপনি আপনার বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করেন, তবে আপনাকে কঠোর মূল্য দিতে হবে।
হোয়াইট হাউস আরও জানিয়েছে, ট্রাম্প বৃহস্পতিবার ক্রিপ্টোকারেন্সি উদ্যোক্তা আর্থার হেইস, বেঞ্জামিন ডেলো এবং স্যামুয়েল রিডকেও ক্ষমা করেছেন।
এই তিনজন বিটমেক্স নামে একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং এটি পরিচালনা করতেন। প্রসিকিউটরদের মতে, তারা রাজস্ব বাড়ানোর জন্য “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানি লন্ডারিং বিরোধী আইনকে ইচ্ছাকৃতভাবে লঙ্ঘন” করেছিল।
এর জেরে তাদের ১০০ মিলিয়ন ডলার জরিমানা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। হেইস, ডেলো এবং রিড ২০২২ সালে ব্যাংক সিক্রেসি অ্যাক্ট লঙ্ঘনের দায় স্বীকার করেন এবং তাদের প্রবেশন দেওয়া হয়েছিল।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস