গাজায় খাদ্য সংকট চরম আকার ধারণ করেছে, যেখানে ইসরায়েলি অবরোধের কারণে জরুরি ত্রাণ পৌঁছানো ব্যাহত হচ্ছে। জাতিসংঘের ত্রাণ বিভাগের প্রধান সতর্ক করে বলেছেন, সীমান্তের কাছাকাছি তাজা খাদ্য পচন ধরছে, অন্যদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা জীবন ধারণের জন্য ক্যানবন্দী খাবারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা আল জাজিরার খবর অনুযায়ী, গাজায় প্রবেশপথগুলো বন্ধ করে দেওয়ায় খাদ্য, ঔষধ এবং জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম আটকা পড়েছে। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার নিরাপত্তা পরিষদে বলেছেন, “যদি মানবিক আইনের মৌলিক নীতিগুলো এখনও বহাল থাকে, তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই তাদের রক্ষার জন্য এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।”
খাদ্য সংকটের কারণে সেখানকার বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। স্থানীয় সবজি বিক্রেতা মুস্তাফা হোমাইদ জানিয়েছেন, বাজারে এখন ক্যানবন্দী খাবার ও কিছু সবজি ছাড়া কিছুই নেই। সবজির দাম কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় মানুষজন চরম বিপাকে পড়েছেন। এক কেজি টমেটোর দাম তিনগুণ বেড়েছে, যা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার একটি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া শিশু আহমেদ বালুশা জানিয়েছে, তার পরিবার এক বছরের বেশি সময় ধরে মাংস খায়নি। বর্তমানে তারা রুটি, পনির এবং ক্যানবন্দী খাবারের ওপর নির্ভরশীল।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, গাজায় তাদের হাতে আর মাত্র ৫,৭০০ টন খাদ্য মজুত আছে, যা দিয়ে তারা সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ তাদের কার্যক্রম চালাতে পারবে। ইসরায়েলি অবরোধের কারণে খাদ্যপণ্যের দাম ব্যাপক হারে বেড়েছে। একটি ২৫ কেজির গমের বস্তা কিনতে এখন ৫০ মার্কিন ডলার (প্রায় ৫,৫০০ টাকা) পর্যন্ত লাগছে, যা গত ১৮ মার্চের আগের দামের চেয়ে ৪০০ শতাংশ বেশি।
মার্চ মাসের শুরু থেকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা করেন যে হামাস যদি জানুয়ারির যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপ বাড়াতে রাজি না হয়, তবে গাজায় খাদ্য ও ত্রাণ প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। তবে হামাস এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে, গাজা থেকে ইসরায়েলি সৈন্য প্রত্যাহার এবং যুদ্ধের সমাপ্তির জন্য দ্বিতীয় ধাপের আলোচনার ওপর জোর দিচ্ছে।
গত ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৯০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সবমিলিয়ে, অক্টোবর ২০২৩ থেকে এ পর্যন্ত নিহত মানুষের সংখ্যা ৫০,২৫১ জনে দাঁড়িয়েছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ১,১৩৯ জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছিল এবং প্রায় ২৫০ জনকে বন্দী করা হয়েছিল, যা বর্তমান যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটায়।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা।