যুদ্ধবিরতির আলোচনা: ইউক্রেনীয়দের উপর চাপ বাড়াতে নতুন আক্রমণের প্রস্তুতি?

যুদ্ধবিরতির আলোচনাকে দুর্বল করতে রাশিয়া নতুন করে সামরিক অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইউক্রেনীয় সামরিক বিশ্লেষক এবং সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এই অভিযান শুরু হতে পারে।

তাদের মতে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধবিরতির আলোচনার চেয়ে এখন আরও বেশি ভূমি দখলের দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন।

সম্প্রতি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানান, রাশিয়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুমি, খারকিভ এবং জাপোরিঝিয়া অঞ্চলে নতুন করে আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্যারিসে এক সফরের সময় তিনি বলেন, রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে আলোচনার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করছে এবং আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ করে আরও বেশি ভূখণ্ড দখলের চেষ্টা করছে।

জেলেনস্কির মতে, পুতিন আলোচনার টেবিলে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে চান।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্রিমিয়া দখলের পর রাশিয়ার সেনারা এখন প্রায় ১০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্রন্ট লাইন ধরে একাধিক দিক থেকে আক্রমণের পরিকল্পনা করছে। তাদের ধারণা, আসন্ন বসন্তের যুদ্ধ মৌসুমকে সামনে রেখে রাশিয়া এই পদক্ষেপ নিতে পারে।

এদিকে, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর, পোক্রোভস্কে রাশিয়ার আক্রমণ তীব্র হয়েছে। এই শহরটি ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি এবং সরবরাহ কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত। পোক্রোভস্কের পতন হলে রাশিয়া পুরো অঞ্চলটি দখলের আরও কাছে চলে আসবে।

অন্যদিকে, রাশিয়ার সেনারা তাদের গোয়েন্দা তৎপরতাও বৃদ্ধি করেছে। ইউক্রেনীয় সেনাদের অবস্থান শনাক্ত করতে এবং তাদের সামরিক সরঞ্জাম ধ্বংস করতে রাশিয়া নিয়মিতভাবে অনুসন্ধানী অভিযান চালাচ্ছে। এছাড়া, রাশিয়া সম্প্রতি কুরস্ক অঞ্চলের ৮০ শতাংশেরও বেশি এলাকা পুনর্দখল করেছে।

তবে, যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা এখনো পর্যন্ত খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তাব দিলেও রাশিয়া তা প্রত্যাখ্যান করেছে। কৃষ্ণসাগরে আংশিক যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনাও রাশিয়ার শর্তের কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছে।

রাশিয়া তাদের রাষ্ট্রীয় ব্যাংককে সুইফট আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেমে পুনরায় যুক্ত করার শর্ত দিয়েছে, যা ইউক্রেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রত্যাখ্যান করেছে।

ফ্রন্ট লাইনে থাকা সেনারা বলছেন, আলোচনা নিয়ে তাদের মধ্যে হতাশা রয়েছে। তারা মনে করেন, আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় যুদ্ধের পরিস্থিতি তাদের জন্য প্রতিকূল হয়ে উঠছে।

আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার এই সামরিক তৎপরতা এবং আলোচনার অচলাবস্থা প্রমাণ করে যে তারা যুদ্ধ বন্ধ করতে চাইছে না, বরং আলোচনাকে নিজেদের সুবিধামতো ব্যবহার করতে চাইছে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *