স্বামীকে ২৫ বছর পর, অন্য পুরুষের প্রতি আকর্ষণ: মনোবিদের বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি

পরকীয়া: সম্পর্কের গভীরে লুকিয়ে থাকা কিছু কারণ

একটি সুখী দাম্পত্য জীবন, যেখানে একজন নারী তার স্বামীর সাথে ২৫ বছর পার করেছেন, তারপরও কেন অন্য পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হলেন? মানুষের সম্পর্কের জটিলতা এবং এর মনোবৈজ্ঞানিক দিকগুলো নিয়ে মনোবিজ্ঞানী জুলিয়েট রোজেনফেল্ডের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো।

অধ্যাপিকা এম, যিনি একজন খ্যাতিমান বিজ্ঞানী, ষাট বছর বয়সে তার জীবনের এই নতুন অধ্যায় শুরু করেন। আপাতদৃষ্টিতে সুখী দাম্পত্য জীবনের আড়ালে, তিনি অনুভব করছিলেন এক গভীর শূন্যতা। পুরোনো এক বন্ধুর সাথে পুনরায় দেখা হওয়ার পর, তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে এক অপ্রত্যাশিত সম্পর্ক। এই সম্পর্কটি ছিল আবেগপূর্ণ, শারীরিক এবং তীব্র।

এই ঘটনার সূত্র ধরে মনোবিজ্ঞানী রোজেনফেল্ড রোগীর জীবনের গভীর বিশ্লেষণে যান। অধ্যাপক এম এর শৈশব এবং অতীতের দিকে তাকালে দেখা যায়, তার বাবার সাথে সম্পর্ক ছিল খুবই দুর্বল। ছোটবেলায় বাবার কাছ থেকে পাওয়া ভালোবাসা এবং মনোযোগের অভাব তাকে সারা জীবন তাড়িয়ে বেড়িয়েছে। সম্ভবত এই কারণেই, তিনি এমন একজন পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন যিনি তাকে সেই ভালোবাসা দিতে পারতেন যা তিনি ছোটবেলায় পাননি।

সম্পর্ক বিশেষজ্ঞের মতে, অনেক ক্ষেত্রে পরকীয়া সম্পর্কের মূল কারণগুলো মানুষের শৈশবের গভীর মনোস্তাত্ত্বিক চাহিদার সাথে জড়িত। শৈশবে যে ভালোবাসা, নিরাপত্তা এবং মনোযোগ মানুষ প্রত্যাশা করে, তা না পাওয়ার ফলে তারা বড় হয়ে অন্য সম্পর্কগুলোতে সেই অভাব পূরণের চেষ্টা করে। অধ্যাপক এম এর ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছিল। তার স্বামীর সাথে ভালো সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও, তিনি অন্য পুরুষের মধ্যে সেই আকাঙ্ক্ষিত ভালোবাসার প্রতিফলন খুঁজেছিলেন।

এই সম্পর্কটি অধ্যাপক এম এর জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। প্রথমে, তিনি আনন্দিত এবং উত্তেজিত ছিলেন। কিন্তু যখন তার প্রেমিক তাকে ছেড়ে চলে যায়, তখন তিনি গভীর মানসিক আঘাত পান। তিনি হতাশায় নিমজ্জিত হন, এবং একসময় আত্মহত্যার কথা পর্যন্ত ভেবেছিলেন। এই ঘটনাগুলো তার পুরনো, গভীর ক্ষতগুলোকে আবার জাগিয়ে তোলে।

থেরাপিস্টের সহায়তায় অধ্যাপক এম ধীরে ধীরে তার অতীতের বেদনাগুলো বুঝতে শুরু করেন। তিনি উপলব্ধি করেন, কেন তিনি তার বাবার অভাব অনুভব করতেন এবং কেন তিনি অন্য পুরুষের মধ্যে সেই শূন্যতা পূরণের চেষ্টা করেছিলেন। তিনি তার মায়ের প্রতি সহানুভূতি অনুভব করতে শুরু করেন, যিনি একসময় একা তার জীবন অতিবাহিত করেছেন।

এই ঘটনার মধ্য দিয়ে অধ্যাপক এম ব্যক্তিগতভাবে আরও পরিণত হন। তিনি তার স্বামীর সাথে সম্পর্ককে নতুনভাবে উপলব্ধি করেন এবং তাদের মধ্যে ভালোবাসার বন্ধন আরও গভীর হয়। তিনি বুঝতে পারেন, সম্পর্কের জটিলতা এবং মানুষের মানসিক চাহিদাগুলো কত গভীর হতে পারে।

পরিশেষে, এই ঘটনা আমাদের সম্পর্কের গভীরতা এবং মনোবৈজ্ঞানিক দিকগুলো সম্পর্কে নতুন ধারণা দেয়। এটি দেখায়, কিভাবে অতীতের অভিজ্ঞতা আমাদের বর্তমান সম্পর্কগুলোকে প্রভাবিত করে এবং কেন আমরা ভালোবাসার জন্য এত আকুল থাকি। আমাদের সবার উচিত নিজেদের এবং অন্যদের সম্পর্কের প্রতি আরও যত্নবান হওয়া এবং প্রয়োজনে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *