আর্ট ডেকো: ব্রাসেলসে এক বর্ণময় উদযাপন। ইউরোপের এক সময়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্যশৈলী হলো আর্ট ডেকো।
জ্যামিতিক নকশা, বিলাসবহুল উপকরণ আর নজরকাড়া মোটিফের মিশেলে তৈরি এই স্থাপত্যশৈলী ১৯২০ ও ১৯৩০ এর দশকে সারা বিশ্বে আলোড়ন তুলেছিল। এবার সেই আর্ট ডেকোর জন্মস্থান হিসেবে ব্রাসেলস নিজেদের দাবি জানাচ্ছে।
২০২৩ সাল জুড়ে তারা এই শৈলীর উদযাপন করছে নানা আয়োজনে।
আর্ট নুভোর জন্য ব্রাসেলসের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না, এই শহরে আর্ট ডেকোরও এক দারুণ ঐতিহ্য রয়েছে।
ব্রাসেলস শহরটিকে ইউরোপের আর্ট ডেকোর কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত করতেই এই উদযাপন। এই উপলক্ষ্যে শহরটিতে নানা প্রদর্শনী, সম্মেলন, উন্মুক্ত দিবসের আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে চলচ্চিত্র প্রদর্শনীও রয়েছে।
এই উদযাপনের কেন্দ্রবিন্দু হলো ভিলা এম্পেইন। এক সময়ের ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া এই বাড়িটি পুনরুদ্ধার করে আবারও আগের রূপে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
মার্বেল পাথরের দেয়ালে যেখানে একসময় অসামাজিক কাজকর্ম চলত, সেখানকার সুইমিং পুলের পাশে সোনালী কারুকাজ করা জানালাগুলো যেন আজও আর্ট ডেকোর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। লুই এম্পেইন এর জন্য ১৯৩৪ সালে তৈরি করা এই ভিলাটি একসময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি কর্মকর্তাদের দখলে ছিল।
এরপর সোভিয়েত ইউনিয়নের দূতাবাস হিসেবেও এটি ব্যবহৃত হয়েছে। পরবর্তীতে আর্মেনীয় শিল্পপতিদের অর্থে এটি পুনরুদ্ধার করা হয় এবং বর্তমানে এখানে আর্ট ও সংস্কৃতির এক মিলনমেলা বসে।
ব্রাসেলসের কোকেলবার্গ ব্যাসিলিকা এবং সেন্টার ফর ফাইন আর্টস (বোজার)-এর মতো বিখ্যাত আর্ট ডেকো স্থাপত্যও এই উদযাপনের অংশ।
আধুনিকতার জয়গান করা এই স্থাপত্যশৈলী শুধু ব্রাসেলসেই নয়, শিকাগো থেকে শুরু করে মস্কো, সাংহাই, বৈরুত সহ বিভিন্ন শহরেও প্রভাব ফেলেছিল।
আর্ট ডেকো আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়। শান্তি ফিরে আসার উল্লাস আর অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দাঁড়িয়ে এই স্থাপত্যশৈলী নতুন দিগন্তের সূচনা করেছিল।
এই সময়ের শিল্পীরা শুধু গ্যালারিতে কাজ করেননি, বরং সমাজের জন্য ওয়ালপেপার ও বিজ্ঞাপনও তৈরি করেছেন।
আর্ট ডেকো বছরটি শুধু স্থাপত্যশৈলীর উদযাপন নয়, বরং যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের অস্থিরতা ও বর্তমান সময়ের মধ্যে সংযোগ স্থাপনেরও একটি প্রয়াস।
ব্রাসেলসের এই আয়োজন, স্থাপত্যপ্রেমীদের জন্য এক দারুণ সুযোগ।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান