হিউস্টন, টেক্সাস-এর হ্যারিস কাউন্টি শেরিফ অফিসের কর্মীদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েছে, যা উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। গত ছয় সপ্তাহের মধ্যে এই বিভাগে কর্মরত চার জন কর্মীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।
এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন শেরিফ এড গঞ্জালেজ। তিনি বলেন, “একজন ডেপুটি যখন আত্মহত্যা করেন, তখন খুব কষ্ট হয়। আমি সবসময় জানতে চাই, তাদের সাহায্য করার জন্য কী করা যেত।”
এই ঘটনাগুলো কর্মকর্তাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। হ্যারিস কাউন্টি শেরিফ অফিসের ওয়েলনেস প্রোগ্রামের প্রধান থমাস ম্যাকনিস-এর মতে, এই ধরনের ঘটনা একটা “বোমা বিস্ফোরণের” মতো।
প্রথমে এটি সরাসরি পরিবার ও বন্ধুদের উপর প্রভাব ফেলে, পরে তা পুরো বিভাগে, প্রতিবেশীদের মাঝে এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে পরে।
আত্মহত্যা করা চার জনের মধ্যে একজন ছিলেন কর্মরত এবং তিনজন প্রাক্তন কর্মকর্তা। এদের মধ্যে একজন ছিলেন ৩৭ বছর বয়সী ক্রিস্টিনা কোহলার, যিনি ২০১৮ সালে বিভাগে যোগ দিয়েছিলেন এবং আদালতের বিভাগে কাজ করতেন।
অন্য তিনজন হলেন লং এনগুয়েন, মারিয়া ভাসকুয়েজ এবং উইলিয়াম বোজম্যান।
এই ঘটনার পর, শেরিফ গঞ্জালেজ বলেছেন, তার অফিস এখনো শোকের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং সবাই মিলে এই ট্র্যাজেডি থেকে শিক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করছে।
একইসাথে, একে অপরের প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছে এবং সাহায্য ও সমর্থন দেওয়ার জন্য কাজ করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে আত্মহত্যার অন্যতম কারণ হলো অবসরের পরে একাকিত্ব অনুভব করা।
অবসর গ্রহণের পর অনেক সময় কর্মীরা তাদের পরিচয়, উদ্দেশ্য এবং সামাজিক সমর্থন হারান। এই কারণে তাদের মধ্যে মানসিক অবসাদ বাড়ে এবং আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যায়।
সিএনএ কর্পোরেশন এবং ফার্স্ট এইচ.ই.এল.পি.-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে সারা দেশে ১,২৮৭ জন সরকারি কর্মচারী আত্মহত্যা করেছেন।
এর মধ্যে ১৭ শতাংশ ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত। এই সংখ্যাটি সম্ভবত আরও বেশি, তবে অনেক ক্ষেত্রে তা প্রকাশ করা হয় না।
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপ এবং আঘাতের শিকার হওয়া কর্মকর্তাদের জন্য অবসর একটি কঠিন সময় হতে পারে।
কারণ, কর্মজীবনে তারা যে সব ঘটনার সম্মুখীন হন, অবসর গ্রহণের পর সেই আঘাতগুলো তাদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে।
হ্যারিস কাউন্টি শেরিফ অফিসের মতো, বর্তমানে প্রায় ৪০ শতাংশ আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রোগ্রাম রয়েছে।
এই প্রোগ্রামগুলোর মাধ্যমে কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থ জীবনযাপনের জন্য সহায়তা করা হয়।
কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সচেতনতা বাড়াতে এবং এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এর মধ্যে রয়েছে কাউন্সেলিং, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশিক্ষণ এবং কর্মীদের জন্য সহায়তা ব্যবস্থা তৈরি করা।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক যেকোনো সমস্যায় সাহায্য চেয়ে এগিয়ে আসাটা জরুরি। আপনি যদি এমন কোনো সমস্যার সম্মুখীন হন, তাহলে সাহায্য চাইতে দ্বিধা বোধ করবেন না।
তথ্য সূত্র: সিএনএন