মৃত্যুদণ্ড পাওয়া কেনিয়ার নাগরিকের লন্ডন পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের মামলা!

ব্রিটিশ পর্যটকদের উপর হামলার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া এক কেনীয় নাগরিকের মামলার জেরে বিপাকে পড়েছে লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ। আলী কোলোলো নামের ওই ব্যক্তি এক দশকের বেশি সময় ধরে কারাবন্দী ছিলেন, যদিও ২০১৩ সালে তাঁর সাজা বাতিল হয়ে যায়।

ব্রিটিশ পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনায় তাঁর জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি, কোলোলোর আইনজীবী জানিয়েছেন, এই ভুলের জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে তারা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

২০১১ সালে কেনিয়ার একটি দ্বীপে ছুটি কাটাতে যাওয়া ব্রিটিশ দম্পতি ডেভিড এবং জুডিথ টেবাটের ওপর হামলা হয়। হামলায় ডেভিড নিহত হন এবং জুডিথকে অপহরণ করা হয়।

মুক্তিপণ দিয়ে জুডিথ ছয় মাস পর মুক্তি পান। কোলোলোকে এই ঘটনার মূল হোতা হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছিল।

আলী কোলোলোর আইনজীবীদের অভিযোগ, ব্রিটিশ পুলিশ কেনিয়ার আদালতে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করেছিল, যার ফলস্বরূপ তাঁর কারাদণ্ড হয়। আইনজীবীরা বলছেন, মেট্রোপলিটন পুলিশ এমন কিছু প্রমাণ পেশ করেছিল, যা কোলোলোকে দোষী সাব্যস্ত করতে সহায়তা করে।

এমনকি, ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (Home Office) কেনিয়ায় পুলিশ কর্মকর্তাদের পাঠাতে অনুমোদন দিয়েছিল, যদিও তারা জানত যে এর ফলস্বরূপ কোলোলোর মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।

ব্রিটিশ সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো বিদেশি সরকারকে এমন কোনো সাহায্য করা যায় না, যা মৃত্যুদণ্ডের দিকে নিয়ে যেতে পারে। কোলোলোর আইনজীবী প্রিথা গোপালান জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র দপ্তরের মধ্যে হওয়া ইমেইল আদান-প্রদান থেকে জানা যায়, কেনিয়ার আদালত কোলোলোকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পরে ব্রিটিশ সরকার বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল।

আলী কোলোলো ঘটনার সময় ওই দ্বীপে মধু সংগ্রহকারী এবং কাঠ কাটার কাজ করতেন। তাঁর আইনজীবীরা আরও অভিযোগ করেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য গোপন করেছিলেন, যা কোলোলোর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে দুর্বল করে দিত।

পুলিশের পক্ষ থেকে একটি পায়ের ছাপকে ঘটনার প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছিল, কিন্তু কোলোলোর আইনজীবী জানান, তাঁর পায়ে সেই সময় কোনো জুতা ছিল না।

আলী কোলোলোর দাবি, তাঁর যথাযথ আইনি সহায়তা ছিল না এবং তিনি নিরক্ষর হওয়ায় নিজের ভাষায় মামলার কার্যক্রম বুঝতেও পারেননি। তাঁর মতে, এই পুরো বিচার প্রক্রিয়াটি ছিল ত্রুটিপূর্ণ।

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কোলোলো জানিয়েছেন, “মৃত্যুদণ্ড পাওয়াটাই ছিল আমার জন্য এক ধরনের নির্যাতন। আমি সৌভাগ্যবান যে মানসিক দিক থেকে সুস্থ অবস্থায় জেল থেকে বের হতে পেরেছি। আমি চাই, আমার মামলা সফল হোক, যাতে আমি অন্য সাধারণ মানুষের মতো জীবন যাপন করতে পারি।”

তিনি আরও বলেন, “আমি আমার পরিবারের ভরণপোষণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতাম, কিন্তু কারাগারে থাকার কারণে সেই সুযোগ হয়নি। আমার স্বাস্থ্যও খারাপ হয়ে গেছে। আমি আগের মতো কাজ করতে পারি না। এখন আমাকে সন্তানদের দেখাশোনা করতে হয় এবং মায়ের জন্য কিছু করতে হয়।”

মেট্রোপলিটন পুলিশের এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নয়। তবে, ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এই মামলার বিষয়ে অবগত আছে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *