বিশ্বের নতুন দেশটিতে কী তবে ভয়ঙ্কর গৃহযুদ্ধ? আতঙ্কে সবাই!

দক্ষিণ সুদানে শান্তি চুক্তি ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা, গৃহযুদ্ধের সম্ভবনা। আফ্রিকার নবীনতম রাষ্ট্র দক্ষিণ সুদানে আবারও গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

কয়েক দশক ধরে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য চলা সংগ্রামের পর দেশটি ২০১১ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু এরপর থেকেই এখানে জাতিগত বিভাজনসহ নানা কারণে অস্থিরতা লেগেই আছে।

সম্প্রতি দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা শান্তি চুক্তির জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ।

২০১৮ সালে হওয়া এক শান্তি চুক্তি, যা কয়েক হাজার মানুষের জীবন কেড়ে নেওয়া এক দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছিল, বর্তমানে তা ভেঙে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে।

দেশটির প্রেসিডেন্ট সালভা কির এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়েক মাচারের মধ্যে ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে গঠিত একটি জোট সরকার বিদ্যমান।

কিন্তু সম্প্রতি ভাইস প্রেসিডেন্ট মাচারকে গ্রেফতার করা হয়।

মাচারের দল এসপিএলএম/এ-আইও (SPLM/A-IO)-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মাচারের এই গ্রেফতারি শান্তি চুক্তিকে কার্যত ভেঙে দিয়েছে।

তাদের মতে, এর ফলে দক্ষিণ সুদানে শান্তি ও স্থিতিশীলতার সম্ভাবনা গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মাচারের গ্রেফতারের আগে এসপিএলএম/এ-আইও দলের আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে আটক করা হয়।

এরপর প্রেসিডেন্ট কিরের আমন্ত্রণে প্রতিবেশী দেশ উগান্ডার সেনা দক্ষিণ সুদানে প্রবেশ করে।

অভিযোগ উঠেছে, তারা স্থানীয় একটি মিলিশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করছে।

এসপিএলএম/এ-আইও উগান্ডার সৈন্যদের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করেছে এবং একে বেসামরিক নাগরিকদের উপর সামরিক আগ্রাসন হিসেবে অভিহিত করেছে।

মাচারও জাতিসংঘের মহাসচিবকে লেখা এক চিঠিতে উগান্ডার সামরিক হস্তক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এটি শান্তি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে।

দক্ষিণ সুদানে এখনও পর্যন্ত কোনো জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।

বর্তমান সরকার ২০১৮ সালের একটি ক্ষমতা ভাগাভাগির চুক্তির ফল।

এই চুক্তির মাধ্যমে পাঁচ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের অবসান হয়েছিল, যেখানে প্রায় চার লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

দেশটির বৃহত্তম দুটি জাতিগোষ্ঠী হলো দিনকা এবং নুয়ের।

প্রেসিডেন্ট কির দিনকা সম্প্রদায়ের এবং মাচার নুয়ের সম্প্রদায়ের নেতা।

সম্প্রতি নাসির শহরে সরকারি বাহিনী এবং নুয়ের মিলিশিয়াদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

এতে কয়েক ডজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।

শুক্রবার দেশটির কর্তৃপক্ষ মাচারকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে।

তাদের অভিযোগ, মাচার নাসির শহরের একটি সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালাতে এবং জাতিসংঘের একটি হেলিকপ্টারে আক্রমণের জন্য মিলিশিয়াদের উস্কানি দিয়েছেন।

যদিও শ্বেত বাহিনী (White Army) নামে পরিচিত নুয়ের মিলিশিয়া মাচার বা তার দলের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করেছে।

দক্ষিণ সুদানের তথ্যমন্ত্রী মিশেল মাকুয়েই এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, মার্চ মাসের শুরু থেকে মাচার সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের উসকানি দিচ্ছিলেন।

তার উদ্দেশ্য ছিল শান্তি বিনষ্ট করা এবং নির্বাচন বানচাল করে দেশকে আবার যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়া।

তিনি এর স্বপক্ষে গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করেছেন।

মাকুয়েই আরও বলেন, মাচার ও এসপিএলএম/এ-আইও-এর ‘যুদ্ধবিরোধী সহযোগীদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসপিএলএম/এ-আইও অবশ্য এসব অভিযোগের কোনো জবাব দেয়নি।

আন্তর্জাতিক মহলের প্রতিক্রিয়া:

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফানে দুজারিক সতর্ক করেছেন, মাচারের গ্রেফতার এবং দেশের অস্থিরতা দক্ষিণ সুদানকে গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, শান্তি চুক্তি ভেঙে যাচ্ছে এবং পরিস্থিতি আগের গৃহযুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দেয়।

যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস ও নরওয়ের দূতাবাস এক যৌথ বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট কিরকে মাচারকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ সৃষ্টি করেছে।

মার্কিন দূতাবাস তাদের নাগরিকদের দক্ষিণ সুদান ত্যাগের পরামর্শ দিয়েছে।

একই ধরনের পরামর্শ দিয়েছে ব্রিটেনও।

আফ্রিকার ইউনিয়ন দক্ষিণ সুদানের রাজধানী জুবাতে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার উদ্দেশ্য হলো পরিস্থিতি শান্ত করা।

প্রতিবেশী দেশ কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুতোর একজন দূত শুক্রবার জুবাতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট কিরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

কেনিয়ার এই দূত বলেছেন, তিনি সংঘাতের সমাধানে একটি সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন এবং পূর্ব আফ্রিকার নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি শান্তি পরিকল্পনা তৈরি করা হবে।

অর্থনৈতিক ও মানবিক সংকট:

বিশ্ব ব্যাংক অক্টোবরে দক্ষিণ সুদানের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে।

তাদের মতে, সহিংসতা, সরকারি সম্পদের দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা মানবিক সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

ডিসেম্বরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটায়, যেখানে তাদের দৈনিক আয় ২.১৫ ডলারেরও কম।

অর্থনৈতিক দুর্দশা সত্ত্বেও, দক্ষিণ সুদান প্রতিবেশী দেশ সুদান, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো এবং সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক থেকে আসা পাঁচ লক্ষেরও বেশি শরণার্থীর আশ্রয়স্থল।

জাতিসংঘ দক্ষিণ সুদানকে ‘একটি প্রান্তের দেশ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে, যেখানে একইসঙ্গে একাধিক সংকট চলছে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *