আতঙ্কে দেশ! এফডিএ-র শীর্ষ কর্মকর্তার পদত্যাগ, বিস্ফোরক অভিযোগ!

যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন (এফডিএ)-এর শীর্ষস্থানীয় ভ্যাকসিন বিষয়ক কর্মকর্তা ড. পিটার মার্কস পদত্যাগ করেছেন। এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে তিনি ভ্যাকসিন সুরক্ষার বিষয়ে “ভুল তথ্য ও মিথ্যাচার” ছড়ানোর জন্য রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রকে (আরএফকে জুনিয়র) অভিযুক্ত করেছেন।

খবর সূত্রে জানা যায়, ডা. মার্কস আগামী ৫ এপ্রিলের মধ্যে পরিচালক পদের দায়িত্ব থেকে অবসর নেবেন।

শুক্রবার (স্থানীয় সময়) ভারপ্রাপ্ত এফডিএ কমিশনার সারা ব্রেনারের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে ডা. মার্কস তার পদত্যাগের সিদ্ধান্তের কথা জানান। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ভ্যাকসিন সুরক্ষার বিষয়ে রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রের উদ্বেগের সমাধানে তিনি কাজ করতে প্রস্তুত ছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি।

চিঠিতে তিনি আরও লেখেন, স্বাস্থ্য সচিবের কাছ থেকে সত্য ও স্বচ্ছতা নয়, বরং তার ভুল তথ্য ও মিথ্যাকে সমর্থন করার প্রত্যাশা করা হচ্ছিল।

ডা. মার্কস এর পদত্যাগ এমন এক সময়ে এলো, যখন স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগ (এইচএইচএস) ১০ হাজার কর্মী ছাঁটাই এবং বেশ কয়েকটি বিভাগ বন্ধ করার পরিকল্পনা করছে। এর মধ্যে রয়েছে আসক্তি পরিষেবা এবং কমিউনিটি হেলথ সেন্টারগুলোর জন্য বিলিয়ন ডলারের তহবিল তদারকি করা বিভাগগুলোও।

এই পরিস্থিতিতে, ভ্যাকসিন বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তার পদত্যাগ জনস্বাস্থ্যখাতে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

ডা. মার্কস কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন এবং চিকিৎসার দ্রুত অনুমোদন ও পর্যালোচনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি “অপারেশন ওয়ার্প স্পিড”-এর ধারণা তৈরি করেন, যা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে ভ্যাকসিন তৈরির প্রক্রিয়াকে দ্রুত করার জন্য নেওয়া হয়েছিল।

এর ফলে ভ্যাকসিনের স্বাভাবিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া কয়েক বছর কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছিল।

অন্যদিকে, রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে ভ্যাকসিন বিরোধী মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। তিনি শিশুদের টিকাকরণের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, যদিও এর আগে সিনেট শুনানিতে তিনি ভ্যাকসিন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার কথা বলেছিলেন।

এদিকে, ডা. মার্কসের পদত্যাগের তীব্র সমালোচনা করেছেন ফিলাডেলফিয়ার চিলড্রেনস হাসপাতালের ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ ড. পল অফিট। তিনি বলেন, “আরএফকে জুনিয়রের মিথ্যা প্রচারণা মেনে নিতে রাজি না হওয়ায় পিটার মার্কসকে সরিয়ে দেওয়াটা আমেরিকার শিশুদের জন্য দুঃখজনক।”

সাবেক এফডিএ কমিশনার ড. রবার্ট ক্যালিফও মার্কসের পদত্যাগপত্রে উত্থাপিত বিষয়গুলোকে “নীতি এবং রোগীর সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রমাণের গুরুত্বের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ যে কেউ” তাদের জন্য ভীতিকর বলে উল্লেখ করেছেন।

ডা. মার্কস তার পদত্যাগপত্রে টিকাকরণের বিরূপ স্বাস্থ্য প্রভাব সম্পর্কিত কিছু পক্ষের তৎপরতা এবং “আমাদের দেশে জনস্বাস্থ্যকে প্রতিকূলভাবে প্রভাবিত করা বৈজ্ঞানিক সত্যের নজিরবিহীন আক্রমণ”-এর বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তিনি জর্জ ওয়াশিংটনের সময় থেকে ভ্যাকসিনের ঐতিহাসিক সুবিধার কথা উল্লেখ করেন এবং বিজ্ঞান সম্পর্কে সন্দেহের কারণে কী হতে পারে, তার প্রমাণ হিসেবে চলমান হামের প্রাদুর্ভাবের কথা তুলে ধরেন।

টেক্সাস, নিউ মেক্সিকো, কানসাস এবং ওহাইওতে হামের প্রকোপ দেখা দিয়েছে, যা টিকাকরণের গুরুত্বকে আবারও সামনে এনেছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকা না নেওয়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই রোগ ছড়িয়ে পড়লে তা দীর্ঘমেয়াদে চলতে পারে এবং স্থানীয়ভাবে রোগ নির্মূলের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অর্জন হুমকির মুখে ফেলতে পারে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *