আর্জেন্টিনার একজন নারীর অবসর জীবন: অনিশ্চয়তার পথে
আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেসের উত্তরে বসবাসকারী ৬০ বছর বয়সী নিলদা রিভাদেনেইরা। আগস্ট মাসে তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু দেশটির সরকার নতুন একটি সিদ্ধান্তের কারণে এখন তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
নিলদা মূলত গৃহকর্মীর কাজ করেন, যা থেকে তার মাসিক আয় প্রায় ৩০০ মার্কিন ডলারের কাছাকাছি। এই সামান্য আয়ে জীবন চালানো কঠিন, তাই তিনি চেয়েছিলেন তার বয়স যখন ৬০ হবে, তখন তিনি পেনশন সুবিধা পাবেন এবং কিছুটা স্বস্তি পাবেন। কিন্তু সরকারের নতুন সিদ্ধান্তের কারণে সেই সুযোগও হারাতে বসেছেন তিনি।
আর্জেন্টিনায় নারীদের জন্য ৬০ বছর বয়স থেকে পেনশন পাওয়ার নিয়ম রয়েছে। তবে, দেশটির প্রেসিডেন্ট জ্যাভিয়ের মলেইয়ের সরকার একটি নতুন পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে নিলদার পেনশন পাওয়ার পথ বন্ধ হতে চলেছে।
মূলত, আগের একটি আইন – যা ‘পেনশন ঋণ পরিশোধ পরিকল্পনা’ বা পেনশন মরেটোরিয়াম নামে পরিচিত ছিল – সেটি নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই আইনের অধীনে, যারা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সরকারি কোষাগারে অর্থ জমা দিতে পারেননি, তারা কিস্তি আকারে সেই বকেয়া পরিশোধ করে পেনশনের জন্য আবেদন করতে পারতেন।
আগে, যারা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন, তারা তাদের পেনশনের কিস্তি পরিশোধ করে অবসরের সুযোগ পেতেন। কিন্তু সরকারের নতুন সিদ্ধান্তের ফলে, নিলদার মতো বহু নারী এখন এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন।
নিলদা জানান, তিনি আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন কাজ করেছেন। তার কর্মজীবনের প্রায় ১৭ বছর তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন, এবং প্রায় ২০ বছর ধরে করেছেন ছোটখাটো কাজ।
কিন্তু সরকারি নিয়মানুযায়ী, পেনশন পাওয়ার জন্য তার আরও কিছু বছর সরকারি কোষাগারে অর্থ জমা দেওয়া প্রয়োজন।
নিলদার হিসাব অনুযায়ী, পেনশন পাওয়ার জন্য তাকে ৫,০০০ ডলারের বেশি জমা দিতে হবে। কিন্তু কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ না থাকায়, আগস্টের মধ্যে পুরো টাকা পরিশোধ করা তার পক্ষে অসম্ভব।
তিনি বলেন, “আমার সন্তানদের সাহায্য চাইলেও, এই মুহূর্তে এত টাকা দেওয়া সম্ভব নয়।”
আর্জেন্টিনায় বয়স্ক মানুষেরা ইতিমধ্যেই সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন। বুয়েনস আইরেসের কংগ্রেস ভবনের সামনে তারা নিয়মিত বিক্ষোভ করছেন।
এমনকি, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে, যেখানে বহু মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বর্তমানে, আর্জেন্টিনার সর্বনিম্ন পেনশন এবং কিছু বোনাসসহ মাসিক প্রায় ৩০০ ডলারের মতো পাওয়া যায়। তবে, সরকার পেনশন খাতে ব্যয় কমাতে চাইছে।
এমন পরিস্থিতিতে, নিলদার মতো বহু প্রবীণ নাগরিক তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। তারা চান, সরকার দ্রুত এই বিষয়ে একটি সমাধান খুঁজে বের করুক, যাতে তারা তাদের বৃদ্ধ বয়সে অন্তত কিছুটা হলেও আর্থিক নিরাপত্তা পান।
নিলদা চান, তিনি যেন সুস্থ শরীরে কাজ করে যেতে পারেন, যাতে অন্তত সন্তানদের ভালো খাওয়াতে পারেন এবং নাতি-নাতনিদের নিয়ে সিনেমা দেখতে যেতে পারেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন