মায়ানমারে ভূমিকম্প: ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে শিশুদের বাঁচাতে হাত লাগালেন স্বেচ্ছাসেবকরা!

মায়ানমারে ভূমিকম্প: ধ্বংসস্তূপের মাঝে উদ্ধার কাজে অসহায় স্বেচ্ছাসেবক, ত্রাণে ধীর গতি।

গত শুক্রবার মায়ানমারের মধ্যাঞ্চলে শক্তিশালী এক ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে মৃতের সংখ্যা ১৬০০ ছাড়িয়ে গেছে, আহত হয়েছে আরও তিন হাজারের বেশি।

ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে সরকারি ত্রাণ পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদেরই উদ্ধার কাজের দায়িত্ব নিতে হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া মানুষদের বাঁচাতে তারা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন, কিন্তু প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে তাদের বেগ পেতে হচ্ছে।

মান্দালয় শহরের কাছে কিয়াউকসে এলাকার একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের ঘটনা বিশেষভাবে হৃদয়বিদারক। ভূমিকম্পের সময় শিশুরা ঘুমিয়ে ছিল।

দুই তলা ভবনটি ধসে পড়লে সেখানে আটকা পড়ে বহু শিশু। স্বেচ্ছাসেবকরা দ্রুত ছুটে এসে উদ্ধার কাজ শুরু করেন। তাদের কাছে ছিল সামান্য কিছু যন্ত্রপাতি – হাতুড়ি, শাবল, ইত্যাদি।

এরপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে শিশুদের উদ্ধারের চেষ্টা চালান। থার ঙ্গে নামের এক স্বেচ্ছাসেবক জানান, তিনি নিজে একটি চার বছরের শিশুকে উদ্ধার করেন।

মেয়েটি বারবার তাকে বাঁচানোর জন্য আকুতি জানাচ্ছিল।

ভূমিকম্পে শুধু কিয়াউকসেই নয়, মায়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলের বহু বাড়িঘর, মন্দির, প্যাগোডা, মসজিদ মাটির সাথে মিশে গেছে। অনেক এলাকার রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে, বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধ্বংসস্তূপের ছবি আর স্বজনদের কান্নায় ভরা আর্তির ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক মানুষ এখনো তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছেন।

ভূমিকম্পের পর দেশটির সামরিক জান্তা কিছু ত্রাণ তৎপরতা শুরু করেছে। তবে তাদের দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে দুর্গত মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় সাহায্য পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোও তাদের কার্যক্রম শুরু করতে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে জানা যায়, দেশটির কিছু অঞ্চলে বিদ্রোহীদের সক্রিয়তার কারণে সামরিক জান্তা তাদের ত্রাণ কার্যক্রমে বাধা দিচ্ছে।

মায়ানমারে এই ভূমিকম্প এমন এক সময়ে আঘাত হেনেছে, যখন দেশটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে চরম অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটির অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে, খাদ্য নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে কমে গেছে।

দেশটির মুদ্রা কিয়াটের মান কমে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে।

মায়ানমারের এই দুর্যোগে বাংলাদেশের করণীয় অনেক কিছু রয়েছে। আমরা বন্ধু হিসেবে তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি।

মানবিক সহায়তা হিসেবে খাদ্য, ঔষধ এবং জরুরি ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো যেতে পারে। এছাড়া, উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য বিশেষজ্ঞ দল পাঠানো যেতে পারে।

প্রয়োজনে, ভূমিকম্পের শিকার মানুষদের জন্য চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বাংলাদেশের সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাগুলো সম্মিলিতভাবে মায়ানমারের জনগণের পাশে দাঁড়ালে, তা হবে দুই দেশের বন্ধুত্বের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *