যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন নিয়ে মুখ খোলায় নির্বাসিত হওয়া রুশ নাট্য পরিচালক দিমিত্রি ক্রিমভ এখন লন্ডনে। সেখানে তিনি ব্রিটিশ অভিনেতা ও কলাকুশলীদের সঙ্গে নতুন একটি প্রযোজনা তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বিশ্বজুড়ে খ্যাতি পাওয়া এই রুশ পরিচালক, যিনি এক সময় মস্কোর নাট্যজগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন, বর্তমানে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন।
তাঁর নতুন কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বিখ্যাত সাহিত্যিক চার্লস ডিকেন্সের দুটি ক্লাসিক উপন্যাস— ‘গ্রেট এক্সপেকটেশনস’ এবং ‘হার্ড টাইমস’।
৭০ বছর বয়সী ক্রিমভ, যিনি তাঁর ব্যতিক্রমী শৈলীর জন্য পরিচিত, সম্প্রতি লন্ডনে এসে পৌঁছেছেন। পশ্চিমা বিশ্বে তিনি অন্যতম সেরা নাট্য পরিচালক হিসেবেও পরিচিত।
ক্রিমভ মনে করেন, বর্তমান রাজনৈতিক বিভাজন সত্ত্বেও ব্রিটিশ ও রুশ শিল্পী এবং দর্শকদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা জরুরি। তাঁর কথায়, “এই কারণেই আমরা ডিকেন্সের কাজ নিয়ে আসতে চেয়েছি।”
তাঁর এই নতুন কাজের প্রস্তুতিতে লেখক ও প্রযোজক মার্গারেট কক্স এবং ক্রিমভের প্রাক্তন ছাত্রী, হ্যামারস্মিথের স্ক্রাম থিয়েটারের লুসি ডকিন্স সহায়তা করছেন।
মার্গারেট কক্সের ভাই অভিনেতা অ্যালান কক্স জানিয়েছেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে ক্রিমভের কাজের অনুরাগী এবং তাঁকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
ক্রিমভ চান, সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান যেন কোনোভাবে ব্যাহত না হয়। তাঁর মতে, নিষেধাজ্ঞার কারণে সম্প্রতি এই ধরনের বিনিময় কঠিন হয়ে পড়েছে।
মস্কো থেকে বিতাড়িত হওয়ার যন্ত্রণা তাঁর কাজে নতুন দিক যোগ করেছে।
তিনি বলেন, “নিজের কষ্টকে শিল্পকলার মাধ্যমে প্রকাশ করা সহজ নয়। সরাসরি, অপ্রকাশযোগ্য ভাষায় নিজের কথা বলতে ইচ্ছে করে।”
২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের তীব্র নিন্দা করে একটি প্রতিবাদপত্রে স্বাক্ষর করার পরেই ক্রিমভের জীবনে এই নির্বাসন নেমে আসে।
তিনি বলেন, “যা আমাদের ধ্বংস করে দেয়, তা আমাদের আরও শক্তিশালী করে তোলে। আমি এখন প্রমাণ করতে চাই, এই অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতেও সবকিছু ভৌতবিদ্যার নিয়মের অধীন নয়।
অন্য কথায়, আমি গভীর খাদে পতিত হতে চাই না, বরং খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে পারফর্ম করতে চাই।”
যুদ্ধের আগে তিনি যখন স্ত্রী ইনার সঙ্গে আমেরিকায় ছিলেন, তখন সেখানকার বন্ধু ও সহকর্মীরা তাঁকে রাশিয়ায় ফিরতে নিষেধ করেন।
কারণ, সেখানে তাঁর জীবন ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। ক্রিমভের মতে, এই যুদ্ধ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতোই এক ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
মস্কোতে তাঁর পরিচালিত সাতটি নাটক বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং বাকি দুটির পোস্টার থেকে তাঁর নাম সরিয়ে দেওয়া হয়।
একসময় সমালোচক এবং দর্শকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন ক্রিমভ। তাঁর কাজের অভিনবত্ব এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার কারণে তিনি বহু সম্মাননা ও পুরস্কার লাভ করেছেন, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ক্রিমভ মনে করেন, রুশ সংস্কৃতিকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার যে প্রবণতা, তা এক ধরনের জাতীয়তাবাদ।
লন্ডনে থাকাকালীন তিনি তাঁর ‘এভরিওয়ান ইজ হিয়ার’ (Everyone Is Here) নামক একটি শো-এর প্রদর্শনীতে অংশ নেবেন, যা থর্নটন ওয়াইল্ডারের ক্লাসিক নাটক ‘আওয়ার টাউন’-এর (Our Town) ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে।
লন্ডনের নাট্যশৈলী সম্পর্কে এখনো তিনি ভালোভাবে অবগত নন। তবে ব্রডওয়ে এবং অফ-ব্রডওয়ের মধ্যেকার পার্থক্য তাঁর চোখে পড়েছে।
ক্রিমভের মতে, “রুশ নাটকের দর্শকরা এমন কিছু জানতে চান, যা সংবাদপত্র বা জনসাধারণের মধ্যে বলা হয় না। ব্রডওয়েতে মানুষ আনন্দ উপভোগ করতে যায়।”
তিনি আরও আশা করেন, যুদ্ধের এই কঠিন সময়েও রাশিয়ানরা গুরুত্বপূর্ণ কিছু শোনার জন্য মুখিয়ে থাকবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান