শিরোনাম: সাহায্য বন্ধ হওয়ায় বিশ্বজুড়ে টিবি রোগীদের চিকিৎসা ঝুঁকিতে, বাড়ছে মৃত্যুহার।
যক্ষ্মা, যা বিশ্বজুড়ে সংক্রামক রোগগুলির মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ঘাতক হিসাবে চিহ্নিত, তার চিকিৎসায় বড় ধাক্কা লেগেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা সতর্ক করে জানিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডি-র (USAID) তহবিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
এর ফলে বিশ্বজুড়ে টিবি (TB) রোগীদের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে, বাড়ছে মৃত্যু সংখ্যা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে প্রায় ১.২৫ মিলিয়ন মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এই রোগের চিকিৎসায় জরুরি ভিত্তিতে ঔষধ ও স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া প্রয়োজন।
কিন্তু সাহায্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, অনেক দরিদ্র দেশের মানুষ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
পাকিস্তানের রাতনা জামনি নামের একজন রোগীর উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। তিনি ওষুধ-প্রতিরোধী যক্ষ্মায় (Drug-resistant TB) আক্রান্ত হয়েছিলেন। ইউএসএআইডি-র অর্থায়নে পরিচালিত একটি এনজিও (NGO)-এর মাধ্যমে তিনি বাড়িতে চিকিৎসা ও মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা পাচ্ছিলেন।
কিন্তু সাহায্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, এখন তাকে চিকিৎসার জন্য অনেক কষ্ট করে ক্লিনিকে যেতে হচ্ছে। তার মতে, “প্রতিটি যাত্রা বেদনাদায়ক, ক্লান্তিকর এবং অপমানজনক। কতদিন যে এভাবে চলতে পারব, জানি না।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাহায্য বন্ধের কারণে কেবল চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে তা নয়, এর ফলে রোগ প্রতিরোধের পরীক্ষাও কমে গেছে। অনেক দেশে রোগ নির্ণয় করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।
এর ফলস্বরূপ, নতুন করে টিবি সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে এবং ভবিষ্যতে এই রোগ আরও মারাত্মক রূপ নিতে পারে।
জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা ‘স্টপ টিবি পার্টনারশিপ’-এর মতে, ইউএসএআইডি-র তহবিল প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে, মাত্র দুই মাসের মধ্যে ১১,০০০ এর বেশি টিবি রোগী অতিরিক্ত মারা গেছেন। এছাড়া, এই বছর টিবি সংক্রমণের হার বিশ্বজুড়ে ২৮-৩২% পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কম্বোডিয়া, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং এসওয়াতিনি-র স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন, সাহায্য বন্ধের কারণে তাদের প্রোগ্রামের সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে রোগ নির্ণয় এবং কমিউনিটি পর্যায়ে সচেতনতা বিষয়ক কাজগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এর ফলস্বরূপ, আক্রান্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না, এবং সময় মতো চিকিৎসা দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না।
উদাহরণস্বরূপ, কম্বোডিয়ার একটি স্থানীয় সংস্থা (KHANA), যারা ইউএসএআইডি-র সহায়তায় কাজ করত, গত পাঁচ বছরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৭ লক্ষ ৮০ হাজারের বেশি মানুষের টিবি পরীক্ষা করেছে। বর্তমানে তাদের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, নতুন রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
চিকিৎসকদের মতে, ঔষধ সরবরাহ এবং চিকিৎসার অভাবে রোগীদের মধ্যে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা (Drug-resistant TB) হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। কারণ, যারা নিয়মিত ঔষধ গ্রহণ করতে পারছিলেন, সাহায্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের অনেকেই এখন ওষুধ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC)-এর সাবেক পরিচালক ড. কেনেথ কাস্ত্রো বলেছেন, “এই ধরনের বিনিয়োগ কমানোর ফলে শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে আরও বেশি খরচ করতে হবে।”
এই পরিস্থিতিতে, বিশ্বজুড়ে টিবি নির্মূলের জাতিসংঘের যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে রোগটি প্রায় নির্মূল করা, তা পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন