ইতালীয় লেখক ভিনচেঞ্জো ল্যাট্রোনিকো-র নতুন উপন্যাস ‘পারফেকশন’ নিয়ে বর্তমানে সাহিত্য জগতে বেশ আলোচনা চলছে। এই উপন্যাসটি ২০২৩ সালের আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে।
ইতালির এই লেখকের জন্ম রোমে, বেড়ে ওঠা মিলানে। বর্তমানে তিনি আবার মিলানেই ফিরে এসেছেন, যদিও মাঝখানে বেশ কয়েক বছর বার্লিনে ছিলেন।
উপন্যাস ‘পারফেকশন’-এর মূল বিষয়বস্তু হল, বর্তমান ডিজিটাল যুগে মানুষের জীবনযাত্রা, বিশেষ করে অনলাইনে ছবি এবং ভোগবাদের প্রভাব। এই উপন্যাসে জর্জেস পেরেক-এর ১৯৬০ দশকের উপন্যাস ‘থিংস’-এর একটি আধুনিক সংস্করণ উপস্থাপন করা হয়েছে।
ল্যাট্রোনিকো-র লেখায়, এই সময়ের ডিজিটাল জগতের মানুষের জীবন এবং তাদের মানসিকতার গভীর বিশ্লেষণ রয়েছে। লেখকের মতে, আজকের দিনে, সামান্য কফি পড়লে, সেই ভুল শুধরানোর জন্য মানুষের প্রথম প্রতিক্রিয়া হয় ‘কমান্ড-জেড’ চাপ দেওয়া, অর্থাৎ ‘আনডু’ করা।
ল্যাট্রোনিকো-র লেখার ধরন বেশ স্বতন্ত্র। তিনি তাঁর লেখায় বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখেন এবং ঘটনার গভীরে প্রবেশ করেন। তাঁর মতে, শৈশবে কমিকস পড়ার অভিজ্ঞতা এবং অনুবাদকের কাজ তাঁর লেখার ধারাকে প্রভাবিত করেছে।
ফরাসি লেখক ফুকো এবং মার্কিন লেখক ফিলিপ রথের মত লেখকদের অনুবাদ করার অভিজ্ঞতা তাঁর শব্দ চয়ন এবং ভাষা শৈলীকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। অনুবাদ করার মাধ্যমে তিনি অন্য লেখকের লেখার জগৎকে নিজের কণ্ঠের মাধ্যমে প্রকাশ করতে শিখেছেন।
রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সমাজের প্রতি বিতৃষ্ণা থেকেই ল্যাট্রোনিকো একসময় ইতালি ছেড়ে বার্লিনে পাড়ি জমিয়েছিলেন। ইতালিতে থাকাকালীন তিনি একটি ভবনে দলবদ্ধভাবে বসবাস করতেন, যেখানে স্থানীয় স্কুল এবং শিল্পীদের নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম চলত।
কিন্তু সেই সময়ে সেখানকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বিভিন্ন আন্দোলনে হতাশ হয়ে তিনি এমন একটি জায়গায় যেতে চেয়েছিলেন, যেখানে তিনি নাগরিক হিসেবে কোনো কিছুর সঙ্গে জড়িত থাকবেন না। বার্লিনে তিনি একটি আন্তর্জাতিক লেখক সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত হন, যেখানে বিভিন্ন দেশের লেখকদের সঙ্গে তাঁর ভাবের আদান-প্রদান ঘটত।
ল্যাট্রোনিকোর উপন্যাস ‘পারফেকশন’-এর প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে ডিজিটাল যুগের দুই তরুণ-তরুণীকে নিয়ে। তাদের সম্পর্কের গভীরতা, ভালো লাগা, ভালোবাসার বাইরেও এই উপন্যাসে ব্যক্তিজীবনের অপূর্ণতা এবং অতৃপ্তির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
লেখকের মতে, মানুষের জীবনে ‘আরও ভালো’ হওয়ার ধারণা একবার প্রবেশ করলে, সেখান থেকে ফিরে আসা কঠিন।
ভিনচেঞ্জো ল্যাট্রোনিকো-র এই উপন্যাসটি শুধু একটি আখ্যান নয়, বরং আধুনিক জীবনের প্রতিচ্ছবি। মানুষের ভেতরের চিন্তা, আকাঙ্ক্ষা এবং ডিজিটাল জগতের প্রভাব— সবকিছুই তিনি তাঁর লেখায় ফুটিয়ে তুলেছেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান