যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা গ্রহণের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের দমন করতে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আইন বিষয়ক সংস্থা, শিক্ষাঙ্গন, গণমাধ্যম এবং বিচার বিভাগের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপ সৃষ্টি করে তিনি তার ক্ষমতাকে সুসংহত করতে চাইছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প নির্বাহী আদেশ, সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যবহার এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে তার বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করছেন। এর ফলস্বরূপ, অনেক প্রতিষ্ঠান হয় তার ইচ্ছের কাছে নতি স্বীকার করছে, নয়তো কোণঠাসা হয়ে পড়ছে।
আইন বিষয়ক সংস্থাগুলোর মধ্যে, ট্রাম্পের বিরাগভাজন হওয়া কয়েকটি সংস্থা তার সঙ্গে আপস করতে বাধ্য হয়েছে। শিক্ষাঙ্গনেও, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের স্বাধীনতা খর্ব করে ট্রাম্পের দাবি মেনে নিতে রাজি হয়েছে।
প্রতিবেদনে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের বিষয়টি। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) মতো স্বাধীন সংবাদ মাধ্যমগুলোকে হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি ট্রাম্পপন্থী মিডিয়া সংস্থাগুলোকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। এছাড়াও, কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে রিপাবলিকান সদস্যরা নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতাকে কার্যত সমর্থন করছেন।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপগুলোর বিরুদ্ধে বিচার বিভাগ কিছু ক্ষেত্রে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। তবে, ট্রাম্প এবং তার মিত্ররা বিচারকদের আক্রমণ করে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প তার ক্ষমতা প্রদর্শনের অংশ হিসেবে বিভিন্ন আইনি সংস্থাকে লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছেন। তিনি তাদের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ এনেছেন এবং তাদের কার্যক্রমকে ব্যাহত করার চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে কিছু সংস্থা ট্রাম্পের সঙ্গে আপস করেছে, আবার কেউ কেউ আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষাঙ্গনের ক্ষেত্রে, ট্রাম্প প্রশাসন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করে তাদের নীতি পরিবর্তনে বাধ্য করেছে। এছাড়াও, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও অর্থ সহায়তা বন্ধের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করার পাশাপাশি, ট্রাম্প তার সমালোচক সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিচ্ছেন। হোয়াইট হাউস এপিকে ওভাল অফিসে প্রবেশ করতে বাধা দিয়েছে। ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশন (এফসিসি) কিছু মিডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই ধরনের পদক্ষেপগুলো যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে দুর্বল করে দিচ্ছে। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, এর মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের চিরতরে নির্মূল করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা কর্তৃত্ববাদের একটি সুস্পষ্ট উদাহরণ।
তবে, বিচার বিভাগ এখনো পর্যন্ত ট্রাম্পের কিছু সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আদালত ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন