মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিবহন খাতে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারণে পরিবর্তন আসতে চলেছে। দেশটির পরিবহন দপ্তর এখন থেকে এমন সব অঞ্চলে তহবিল দিতে বেশি আগ্রহী হবে, যেখানে জন্মহার এবং বিবাহের হার জাতীয় গড়ের তুলনায় বেশি।
সাবেক কংগ্রেসম্যান এবং বর্তমান পরিবহন সচিব শন ডাফি এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, এর মাধ্যমে ‘সুদৃঢ় অর্থনৈতিক নীতি’ অনুসরণ করা হবে।
ডাফির এই নতুন নীতি বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে কারণ এর ফলে রিপাবলিকান অধ্যুষিত রাজ্যগুলো লাভবান হতে পারে। সিএনএন-এর করা এক বিশ্লেষণ অনুসারে, এই ধরনের পরিবর্তন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলের জন্মহার এবং বিবাহের হারের ভিন্নতার ওপর প্রভাব ফেলবে।
উদাহরণস্বরূপ, টেক্সাস এবং পশ্চিমা রাজ্যগুলোতে, যেখানে তরুণ প্রজন্মের বসবাস বেশি, সেখানে এই নীতির কারণে বেশি অর্থ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে, যেসব শহরে তুলনামূলকভাবে কম মানুষ বিয়ে করেন এবং সন্তান নেন, সেসব অঞ্চলের জন্য তহবিল কমে যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের ফলে পরিবহন খাতে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কানেকটিকাটের নিউ হ্যাভেন শহরের মেয়র জাস্টিন এলিকার মনে করেন, এই নীতি স্পষ্টতই রিপাবলিকান প্রভাবিত রাজ্যগুলোর প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট।
তিনি আরও বলেন, “রাস্তা বানানোর সঙ্গে সন্তান জন্মদানের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা সম্ভবত এমন একটি সিদ্ধান্ত, যা রিপাবলিকান রাজ্যগুলোর জন্য অগ্রাধিকার তৈরি করবে।
ডাফি অবশ্য তার এই নীতির পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছেন, যে অঞ্চলে পরিবার এবং শিশু বেশি, সেখানেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেখা যায়। তিনি আরও উল্লেখ করেন, অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
তবে, বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন নজির আগে দেখা যায়নি। পপুলেশন রেফারেন্স ব্যুরোর সিনিয়র প্রোগ্রাম ডিরেক্টর বেথ জারোশ বলেছেন, পরিবহন পরিকল্পনা ও জনসংখ্যা বিষয়ক গবেষণায় তিনি এমনটা দেখেননি।
এই নীতির কারণে ফেডারেল কর্মকর্তারা রাজ্য, কাউন্টি বা শহরের ভিত্তিতে অর্থ বরাদ্দ করবেন কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে, তথ্যের অভাবে বিবাহের হার নির্ণয় করা কঠিন হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, যারা ডেস্টিনেশন ওয়েডিংয়ের জন্য পরিচিত, যেমন লাস ভেগাস ও হাওয়াই, সেখানকার বিবাহ-হার অনেক বেশি।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যেসব রাজ্যে ট্রাম্পের সমর্থন বেশি, সেখানে জন্মহার ও বিবাহের হারও বেশি। ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্পের সমর্থন পাওয়া রাজ্যগুলোর প্রায় ৭০ শতাংশের জন্মহার জাতীয় গড়ের উপরে ছিল, যেখানে হ্যারিসের সমর্থন পাওয়া রাজ্যগুলোর মধ্যে এই হার ছিল মাত্র ১৫ শতাংশ।
একইভাবে, ট্রাম্পের রাজ্যে বিবাহের হারও বেশি ছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জন্মহার ও বিবাহ হারের এই ভিন্নতার পেছনে বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। যেসব অঞ্চলে তরুণ প্রজন্মের বসবাস বেশি, সেখানে জন্ম ও বিবাহের হার বেশি থাকে।
এছাড়া, ধর্মীয় বিশ্বাসও এর ওপর প্রভাব ফেলে।
পরিবহন খাতে তহবিল বরাদ্দের এই নতুন নীতির ফলে উচ্চ-আয়ের এলাকা এবং শ্বেতাঙ্গ জনসংখ্যার আধিক্য রয়েছে এমন অঞ্চলে বেশি অর্থ যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে সম্ভবত মহাসড়কগুলোতে বিনিয়োগ বাড়বে, যা জনপরিবহনের ক্ষেত্রে প্রতিকূলতা সৃষ্টি করতে পারে।
পরিবহন সচিব শন ডাফির এই নীতি এমন একটি সময়ে এসেছে, যখন রক্ষণশীল গোষ্ঠীগুলো জন্মহার ও বিবাহ হারের ভিত্তিতে তহবিল বরাদ্দের পক্ষে কথা বলছে। তারা মনে করে, এটি পরিবারের প্রতি সমর্থন বাড়ানোর একটি পদক্ষেপ।
তবে, বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের নীতি প্রণয়নের পরিবর্তে সরকার শিশুদের জন্য উপযুক্ত স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন
 
                         
                         
                         
                         
                         
                         
				
			 
				
			 
				
			 
				
			