জার্মানিতে ছুটি কাটিয়ে ৮০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা মাকে হামবুর্গ বিমানবন্দরে একা ফেলে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিশেষভাবে সাহায্য প্রয়োজন এমন একজন বৃদ্ধাকে বিমানে উঠতে না দিয়ে, তাঁর চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রসহ লাগেজ বিমানে তুলে দেয়ায় চরম হয়রানির শিকার হয়েছেন তাঁর পরিবার।
এই ঘটনায় বিমান সংস্থা রায়ানএয়ারের (Ryanair) বিরুদ্ধে যাত্রী সুরক্ষায় গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, ওই বৃদ্ধার মেয়ে জার্মানি থেকে মাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে ফিরছিলেন। বিশেষভাবে সাহায্য করার জন্য তিনি আগে থেকেই ব্যবস্থা করেছিলেন।
বিমানবন্দরের কর্মীরা হুইলচেয়ারে করে বৃদ্ধাকে বোর্ডিং গেটের কাছে নিয়ে যান এবং বিমানের কর্মীরা এসে তাঁকে সিটে বসিয়ে দেবেন বলে জানান।
কিন্তু বিমান ছাড়ার সময় দেখা যায়, বৃদ্ধা সেখানেই একা দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর ডায়াবেটিসের ওষুধপত্রসহ লাগেজ বিমানেই রয়ে গেছে।
ভুক্তভোগীর মেয়ে জানান, তাঁর মা কানে কম শোনেন, তাই বিমানের ঘোষণা শুনতে পাননি।
পরে তিনি বিমানবন্দরে ফিরে এসে মাকে খুঁজে পান।
এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, একজন বয়স্ক, হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী মহিলা গেট খালি হওয়ার পরেও সেখানে একা ছিলেন, অথচ বিমানবন্দরের কর্মীদের সেদিকে কোনো খেয়াল ছিল না।
একইসঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, নিরাপত্তা কর্মীদের নজরদারির অভাবে কীভাবে একজন যাত্রীর অনুপস্থিতিতে তাঁর লাগেজ বিমানে উঠতে পারলো?
ভুক্তভোগীর অভিযোগের পর, বিমান সংস্থাটি প্রথমে দায় এড়িয়ে যায়। তারা জানায়, বিশেষ সহায়তার কাজটি তৃতীয় কোনো পক্ষ করে থাকে, তাই তাদের কোনো দায় নেই।
তবে ভোক্তা আইন বিশেষজ্ঞ গ্যারি রিক্রফটের (Gary Rycroft) মতে, বিমান সংস্থাটি কেবল বিমানের ভেতরে যাত্রী সুরক্ষার জন্য দায়ী। বিমানবন্দরের দায়িত্ব হলো যাত্রী বিমানে না ওঠা পর্যন্ত সহযোগিতা করা।
ঘটনার পর ভুক্তভোগীর পরিবার হামবুর্গ বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ রায়ানএয়ারকে দোষারোপ করে জানায়, বোর্ডিং শুরু হওয়ার বিষয়টি তারা সময় মতো জানায়নি।
অন্যদিকে, রায়ানএয়ারের দাবি, বিশেষ সহায়তা প্রদানকারী দলের কর্মীরা বিমানবন্দরের ঘোষণা শুনতে পাননি।
লাগেজ প্রসঙ্গে প্রথমে তারা জানায়, সেটি নামিয়ে ফেলা হয়েছে, পরে স্বীকার করে নেয়, সেটিও তাদের গাফিলতির কারণে হয়নি।
এ বিষয়ে জার্মানির বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, নিরাপত্তা মানদণ্ড পূরণ করা হলে যাত্রীবিহীন লাগেজ পাঠানো যেতে পারে।
তবে তারা বিস্তারিত কিছু জানাতে রাজি হয়নি।
ভুক্তভোগীর পরিবার এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) বিধিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগে দেশটির বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে অভিযোগ জানাতে পারে।
সেই সঙ্গে লাগেজ বিমানে তোলার ক্ষেত্রে গাফিলতির কারণে ক্ষতিপূরণের জন্য রায়ানএয়ারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও সুযোগ রয়েছে।
বিষয়টি বাংলাদেশেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
বয়স্ক ও বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের প্রতি আমাদের সমাজে শ্রদ্ধাবোধ ও সহযোগিতার সংস্কৃতি রয়েছে।
তাই এ ধরনের ঘটনায় যাত্রী অধিকার এবং ভ্রমণের সময় বিশেষ সহায়তার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নতুন করে সচেতনতা তৈরি হয়েছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান