একান্তে সময় কাটাতে: ইতালির বাতিঘর, যা এখন দ্বীপের আশ্রয়!

ইতালির টাস্কানির উপকূল থেকে একটু দূরে, টাইরেনিয়ান সাগরের বুকে জেগে ওঠা একটি দ্বীপ হলো গিগলিও। শান্ত সবুজ এই দ্বীপটি যেন প্রকৃতির এক অপূর্ব সৃষ্টি।

আর এই দ্বীপেরই দক্ষিণ প্রান্তে, সমুদ্রের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে এক অত্যাশ্চর্য লাল-সাদা ডোরাকাটা বাতিঘর – ফ্যারো ক্যাপেল রোসো।

আগে নাবিকদের পথ দেখানোর কাজটি করত এই বাতিঘরটি। কিন্তু বর্তমানে এটি একটি বিশেষ ধরনের গেস্ট হাউসে রূপান্তরিত হয়েছে, যা পর্যটকদের কাছে এক দারুণ আকর্ষণ।

যারা নির্জনতা ভালোবাসেন এবং প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে চান, তাদের জন্য এই স্থানটি যেন এক স্বর্গরাজ্য। এখানে আসাটা একটা বিশেষ অভিজ্ঞতা, কারণ বাতিঘর পর্যন্ত পৌঁছানোর পথটিও কম আকর্ষণীয় নয়।

টাস্কানির উপকূল থেকে নৌকায় করে গিগলিও দ্বীপে পৌঁছতে হয়, তারপর দ্বীপের আঁকাবাঁকা পথ ধরে হেঁটে বা হেলিপ্যাডের মাধ্যমে বাতিঘরে যাওয়া যায়।

বাতিঘরের চারপাশের দৃশ্যও অসাধারণ। একদিকে দিগন্ত বিস্তৃত নীল সমুদ্র, আর অন্য দিকে পাথুরে পাহাড় আর সবুজ বনানী।

বাতিঘরের কাছেই রয়েছে পরিষ্কার জলের ছোট ছোট উপসাগর, যেখানে সাঁতার কাটার চমৎকার সুযোগ আছে। এছাড়াও, এখানে স্কুবা ডাইভিং এবং ইয়টিংয়েরও ব্যবস্থা রয়েছে।

বাতিঘরের ঘরগুলো সাজানো হয়েছে খুব সুন্দরভাবে। পুরোনো দিনের সামুদ্রিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে বাতিঘরের ভেতরের আলো ও আসবাব তৈরি করা হয়েছে, যা এর সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তোলে।

এখানকার ঘরগুলো থেকে সমুদ্র আর আকাশের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা যায়।

এই বাতিঘরে থাকার অভিজ্ঞতা সত্যিই অন্যরকম। দিনের বেলা হাইকিং, সাঁতার বা দ্বীপের আশেপাশে ঘুরে বেড়ানো যেতে পারে।

রাতের বেলা, বাতিঘরের ছাদ থেকে তারা ভরা আকাশ দেখা এক অসাধারণ অনুভূতি দেয়। এখানকার পরিবেশ এতটাই শান্ত যে, রাতের আকাশে তারাগুলো যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

এখানকার কর্মীরা খুব আন্তরিকভাবে অতিথিদের দেখাশোনা করেন এবং স্থানীয় খাবার পরিবেশন করেন।

গিগলিও দ্বীপে আসার সেরা সময় হলো মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত, যখন আবহাওয়া বেশ মনোরম থাকে।

তবে, নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত এখানে সাঁতার কাটার মতো অনুকূল পরিবেশ থাকে। যারা একটু নিরিবিলি ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই বাতিঘরটি একটি আদর্শ জায়গা।

এখানে প্রকৃতির নীরবতা উপভোগ করার পাশাপাশি, ইতালির সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার স্বাদও পাওয়া যায়। যারা একটু অন্যরকম অভিজ্ঞতা পেতে চান, তাদের জন্য এই স্থানটি হতে পারে একটি স্মরণীয় গন্তব্য।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *