যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাকে কাজ করা এক নারীর জীবন বদলে দেওয়া কৌতুক জগতে প্রবেশের গল্প।
আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিষয়ক এক কঠিন পেশা ছেড়ে দিয়ে কিভাবে একজন নারী কৌতুক জগতে প্রবেশ করলেন? তাঁর বন্ধু, সহকর্মীর মৃত্যু কিভাবে তাঁকে এই পথে নিয়ে এলো? এমন একটি অনুপ্রেরণামূলক গল্প শুনুন, যিনি এখন একজন সফল লেখক এবং কমেডিয়ান।
ব্রিটিশ নাগরিক নুসাইবাহ ইউনুস একসময় আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করতেন। ইরাকে শান্তি ফিরিয়ে আনার মিশনেও তিনি যুক্ত ছিলেন। কিন্তু তাঁর বন্ধু এবং সহকর্মী হিশাম আল- হাশিমির হত্যাকাণ্ডের পর তাঁর জীবন মোড় নেয়।
হিশাম ছিলেন একজন সাংবাদিক, যিনি ইরাকের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করতেন। তাঁর মৃত্যু নুসাইবাহর জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। হিশামের হাসি-খুশি, জীবনের কঠিন পরিস্থিতিগুলোও হাসিমুখে মোকাবেলা করার মানসিকতা নুসাইবাহকে নতুন করে ভাবতে শেখায়।
হিশামের মৃত্যুর পরেই নুসাইবাহ তাঁর ভেতরের লুকানো কৌতুকপ্রিয় মানুষটির সন্ধান পান। ছোটবেলা থেকেই তিনি কমেডি ভালোবাসতেন। বন্ধুদের সাথে হাসাহাসি করতে তাঁর ভালো লাগতো।
ইরাকে কাজ করার সময়ও তিনি কমেডি ভিডিও দেখতেন, যা তাঁর মানসিক শান্তির জন্য জরুরি ছিল।
হিশামের মৃত্যুর পর নুসাইবাহ তাঁর ভেতরের এই ভালো লাগাটিকে গুরুত্ব দিতে শুরু করেন। তিনি লন্ডনের একটি কমেডি ক্লাবে ভর্তি হন এবং স্ট্যান্ড-আপ কমেডি শেখা শুরু করেন।
শুরুতে মঞ্চে উঠতে তাঁর ভয় লাগতো, কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। তাঁর জীবনের অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে ইরাকে কাজ করার সময়কার বিচিত্র সব ঘটনা, তাঁর কমেডি পরিবেশনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে।
ইরাকের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, বিদেশি সাহায্য সংস্থাগুলোর অদ্ভুত আচরণ—এসব নিয়েই তিনি কৌতুক করতেন।
কমেডি ক্লাসের প্রশিক্ষণ নুসাইবাহর লেখক জীবনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাঁর জীবনের গল্প নিয়ে লেখা একটি উপন্যাসে কৌতুককে তিনি দারুণভাবে ব্যবহার করেছেন।
তাঁর উপন্যাসটি শুধু পাঠকপ্রিয়তা লাভ করেনি, সমালোচকদেরও প্রশংসা কুড়িয়েছে। নুসাইবাহ মনে করেন, কৌতুক তাঁর উপন্যাসের সাফল্যের পেছনে অন্যতম কারণ।
তাঁর এই সাফল্যের পর তিনি এখন নিয়মিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কৌতুক পরিবেশন করেন।
কৌতুক জগতে নুসাইবাহর যাত্রা অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা হতে পারে। জীবন কত বিচিত্র, আর মানুষ কত সহজে জীবনের কঠিন পরিস্থিতিগুলো অতিক্রম করতে পারে, নুসাইবাহ যেন তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান