সুদানের রাজধানী খার্তুম থেকে পিছু হটেছে দেশটির আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)। বাহিনীর প্রধান মোহামেদ হামদান দাগালো, যিনি হেমেটি নামেই পরিচিত, এক অডিও বার্তায় এই খবর নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, কৌশলগত কারণে তারা রাজধানী ছেড়েছেন এবং ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসার অঙ্গীকার করেছেন।
রবিবার টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে প্রচারিত ওই বার্তায় হেমেটি বলেন, “গত কয়েকদিনে আমাদের বাহিনী খার্তুম থেকে ওমদুরমানে সরে এসেছে। এটা ছিল নেতৃত্বের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত।
তবে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “যারা মনে করেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোনো আলোচনা বা সমঝোতা চলছে, তারা ভুল করছেন।
তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো আলোচনা হবে না, অস্ত্রের ভাষাই একমাত্র পথ।
অন্যদিকে, সুদানিজ সেনাবাহিনীর প্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানও আরএসএফকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করার ঘোষণা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমরা ক্ষমা করব না, আপস করব না, এমনকি কোনো আলোচনাও করব না।” গত কয়েক সপ্তাহে সেনাবাহিনী খার্তুমের রাষ্ট্রপতি প্রাসাদ, যুদ্ধবিধ্বস্ত বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
আল-বুরহান জোর দিয়ে বলেন, “সুদানের শেষ প্রান্ত থেকে শেষ বিদ্রোহী নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত আমাদের বিজয় সম্পন্ন হবে না।”
দুই বছর ধরে চলা এই গৃহযুদ্ধের মূল কারণ হলো, বেসামরিক শাসনের দিকে যাওয়ার আগে সেনাবাহিনী এবং আরএসএফের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই।
জাতিসংঘের মতে, এই যুদ্ধ বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ ক্ষুধা ও বাস্তুচ্যুতির সংকট তৈরি করেছে।
এক কোটি ২০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, এবং বহু মানুষ নিহত হয়েছে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, দেশটির কিছু অংশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে।
শুধু খার্তুম রাজ্যেই, গত ১৪ মাসে প্রায় ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
বর্তমানে, সুদানিজ সেনাবাহিনী খার্তুম, ওমদুরমান এবং খার্তুম নর্থ—এই তিনটি শহরকে নিয়ে গঠিত রাজধানী অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইছে।
ওমদুরমানে আরএসএফের এখনো কিছু এলাকা দখলে রয়েছে।
নীলনদ দ্বারা বিভক্ত এই শহরগুলোতে প্রায়ই সংঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদানে মানবিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।
খাদ্য, আশ্রয় এবং চিকিৎসা সেবার অভাবে সেখানকার সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং শান্তি ফিরিয়ে আনতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা