মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত নতুন শুল্ক নীতি নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে। তিনি এই শুল্ক আরোপের দিনটিকে ‘মুক্তি দিবস’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তবে অর্থনীতিবিদদের ধারণা, এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের দাম বাড়তে পারে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও কমে যেতে পারে।
অন্যান্য দেশগুলোও এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে এবং পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ট্রাম্পের এই নতুন শুল্কের বিস্তারিত এখনো স্পষ্ট নয়। তিনি আমদানি শুল্ক আরোপ করতে চান, যার মধ্যে অন্যান্য দেশ কর্তৃক ধার্যকৃত শুল্কের সমান ‘পাল্টা শুল্ক’ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রাজিল এবং ভারতের মতো দেশগুলোর উপর শুল্ক আরোপের কথা তিনি বলেছেন। গত সপ্তাহে, তিনি ২৫ শতাংশ হারে গাড়ির উপর শুল্ক ঘোষণা করেন এবং এর কারণ হিসেবে জানান, আমেরিকা অন্যান্য দেশ থেকে বেশি পণ্য আমদানি করে, যা দেশের জন্য ক্ষতিকর।
ট্রাম্পের মতে, এই শুল্ক ‘আমেরিকার মুক্তি দিবস’-এর সূচনা করবে। তিনি বলেন, “আমরা আমাদের দেশে ব্যবসা করা এবং আমাদের চাকরি, সম্পদ, এমনকী অনেক কিছু কেড়ে নেওয়া দেশগুলোর কাছ থেকে কর আদায় করব। বন্ধু এবং শত্রু উভয়ই আমাদের দেশ থেকে অনেক কিছু নিয়েছে, এবং সত্যি বলতে, অনেক সময় বন্ধুর আচরণ শত্রুর চেয়েও খারাপ ছিল।”
তবে, অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এই শুল্কের কারণে ভোক্তাদের জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। গাড়ির দাম, খাদ্যদ্রব্য, এমনকি বাড়ির দামও বাড়তে পারে।
এর ফলে কোম্পানির মুনাফা কমতে পারে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, অর্থনীতিবিদ আর্ট লাফারের মতে, এই শুল্ক কার্যকর হলে প্রতিটি গাড়ির দাম প্রায় ৪,৭১১ ডলার (প্রায় ৫ লক্ষ টাকা)-এর বেশি বাড়তে পারে।
গোল্ডম্যান স্যাকস-এর হিসাব অনুযায়ী, এই বছর আমেরিকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে মাত্র ০.৬ শতাংশ, যেখানে গত বছর এটি ছিল ২.৪ শতাংশ।
অন্যান্য দেশগুলোও ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বলেছেন, শুল্কের হুমকির কারণে তার দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কানাডা এরই মধ্যে পাল্টা শুল্কের ঘোষণা দিয়েছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, এই শুল্ক ‘অসংলগ্ন’। এর ফলে স্বল্প মেয়াদে মূল্যস্ফীতি বাড়বে এবং কর্মসংস্থান কমবে।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেইনবাম মনে করেন, এই শুল্ক তাদের দেশের শ্রমিকদের জন্য ক্ষতিকর হবে। চীনের সরকার বলেছে, ট্রাম্পের শুল্ক ব্যবস্থা বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থার ক্ষতি করবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাণিজ্য যুদ্ধ বা শুল্ক যুদ্ধের কোনো বিজয়ী নেই। কোনো দেশই শুল্ক আরোপের মাধ্যমে উন্নতি লাভ করতে পারে না।
তথ্য সূত্র: Associated Press