যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার পরেও প্রতিশোধের পথে হেঁটেছেন, এমনটাই জানা যাচ্ছে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ক্ষমতা থাকাকালীন সময়ে যারা তার সমালোচক ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পিছপা হননি তিনি।
এই তালিকায় ছিল নামকরা ল’ ফার্ম থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এমনকি সংবাদমাধ্যমও।
ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন সূত্রে খবর, তিনি তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের শায়েস্তা করতে নির্বাহী আদেশের আশ্রয় নিয়েছেন।
এর মাধ্যমে তিনি সমালোচকদের কণ্ঠরোধ করতে চেয়েছেন। এই পদক্ষেপগুলোর কারণে অনেক সংস্থাই এখন তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত।
উদাহরণস্বরূপ, নিউইয়র্কের একটি খ্যাতনামা ল’ ফার্ম, পল, উইস, রিফকিন্ড, ওয়ার্টন অ্যান্ড গ্যারিসন এলএলপি (Paul, Weiss, Rifkind, Wharton & Garrison LLP)-এর কথা বলা যায়। জানা যায়, এই ফার্মের একজন আইনজীবী ম্যানহাটনের কৌঁসুলী হিসেবে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তদন্ত করেছিলেন।
এর ফলস্বরূপ, ট্রাম্পের নির্দেশে ফার্মটির আইনজীবীদের নিরাপত্তা ছাড়পত্র বাতিলের পাশাপাশি, তাদের ফেডারেল সরকারের সঙ্গে করা চুক্তিও বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এমনকি, সরকারি ভবনগুলোতে তাদের প্রবেশাধিকারও সীমিত করে দেওয়া হয়।
তবে, শেষ পর্যন্ত একটি সমঝোতার মাধ্যমে এই পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হয়। ওই সমঝোতার অংশ হিসেবে, ফার্মটি প্রশাসনকে প্রায় ৪ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের আইনি সহায়তা দিতে রাজি হয়।
এই ঘটনাকে অনেকে, বিশেষ করে আইনজীবীরা, ট্রাম্পের কাছে নতিস্বীকার হিসেবে দেখছেন।
শুধু পল, উইসই নয়, আরো অনেক প্রতিষ্ঠান ট্রাম্পের রোষানলে পড়েছে।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে ফেডারেল তহবিল হারানোর হুমকি দেওয়া হয়, যার ফলস্বরূপ তারা তাদের নীতিমালায় পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়। একইভাবে, স্ক্যাডেন, আর্পস, স্লেট, মেইগার অ্যান্ড ফ্লম (Skadden, Arps, Slate, Meagher & Flom) নামের একটি ল’ ফার্মকেও একই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়।
সংবাদ সংস্থা এবিসি নিউজ এবং মেটা’র (ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান) সঙ্গেও ট্রাম্পের বিরোধ দেখা দেয় এবং শেষ পর্যন্ত তাদের সঙ্গেও একটি সমঝোতা হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প ক্ষমতা থাকাকালীন সময়ে তার বিরোধীদের দমন করতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছেন।
এর মধ্যে ছিল নির্বাহী আদেশ জারি করা, সরকারি তহবিল বন্ধ করে দেওয়া এবং মানহানির মামলা করা। এর মাধ্যমে তিনি তার প্রতিপক্ষদের ভীত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
শিক্ষাঙ্গনেও ট্রাম্পের এই প্রতিহিংসা দেখা গেছে।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তারা তাদের ক্যাম্পাসে ইহুদিবিদ্বেষী কার্যক্রম বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর ফলস্বরূপ, ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়টির ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং তাদের নীতি পরিবর্তনে বাধ্য করে।
একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও, যেখানে একজন ট্রান্সজেন্ডার সাঁতারুর কারণে প্রায় ১৭ কোটি ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলারের ফেডারেল তহবিল স্থগিত করা হয়।
গণমাধ্যমও ট্রাম্পের আক্রমণের শিকার হয়েছে।
এবিসি নিউজের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা হয় এবং পরে তা মীমাংসা করা হয়। এছাড়া, মেটা’র (Meta) সঙ্গেও একই ধরনের একটি মামলা হয়, যেখানে ট্রাম্প তার অ্যাকাউন্ট স্থগিত করার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।
এমনকি, ভয়েস অফ আমেরিকার মতো সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার কর্মীদেরও ছাঁটাই করার চেষ্টা করা হয়।
ট্রাম্পের এই প্রতিশোধের রাজনীতি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
কেউ কেউ মনে করেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প তার ক্ষমতা প্রয়োগ করেছেন, আবার অনেকে একে ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবে দেখছেন।
তবে, ট্রাম্প যে তার বিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করেননি, তা বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস