মরুভূমিকে সবুজ করে তুলতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় অভিনব এক উদ্যোগ নিয়েছে একটি স্টার্টআপ কোম্পানি। তারা কৃষি বর্জ্য এবং শৈবালের সমন্বয়ে এমন একটি মিশ্রণ তৈরি করছে যা অনুর্বর জমিতেও গাছপালা জন্মাতে সহায়ক হবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের (সংযুক্ত আরব আমিরাত) একটি কোম্পানি, হাইভজিও (HyveGeo), এই উদ্ভাবনী প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছে। তাদের লক্ষ্য হলো, একদিকে যেমন মরুভূমিকে সবুজ করা, তেমনি কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
হাইভজিও-এর উদ্ভাবনের মূল ভিত্তি হলো ‘বায়োচার’ (Biochar)। এটি এক ধরনের কয়লার মতো পদার্থ, যা জৈব উপাদানকে অক্সিজেনের অভাবে পুড়িয়ে তৈরি করা হয়। তারা স্থানীয় খেজুর বাগান ও অন্যান্য কৃষি বর্জ্য থেকে এই উপাদান সংগ্রহ করে।
এরপর, বিশেষ প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে এটিকে মাটির উপযোগী করে তোলা হয়। বর্তমানে, আবুধাবিতে তাদের একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্পে প্রায় ২০০ টন বায়োচার উৎপাদন করা হচ্ছে, যার ফলে প্রায় ৮০০ টন বর্জ্য ল্যান্ডফিলে যাওয়া থেকে রক্ষা করা গেছে।
২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে, তারা একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র চালু করার পরিকল্পনা করছে, যেখানে বছরে প্রায় ৪০,০০০ টন জৈব উপাদান প্রক্রিয়াকরণ করা সম্ভব হবে।
বায়োচারের মূল সীমাবদ্ধতা হলো, এটি মরুভূমির বালুকাময় মাটিতে সরাসরি ব্যবহার করলে তেমন ফল পাওয়া যায় না। তাই, হাইভজিও এই সমস্যার সমাধানে কাজে লাগাচ্ছে মাইক্রো-শৈবাল বা ক্ষুদ্র আকারের শৈবালকে।
শৈবালগুলি সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে। হাইভজিও প্রথমে শৈবাল থেকে বায়োচার তৈরির চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পরে তারা বুঝতে পারে যে এটি কার্যকর নয়।
এরপর তারা ‘বায়ো-রিফাইনারি’ ধারণা ব্যবহার করে শৈবাল থেকে ‘বায়োঅ্যাকটিভ’ উপাদান বের করে আনে। এই উপাদানগুলি জৈব সার বা ‘বায়োস্টিমুলেন্ট’ হিসেবে কাজ করে, যা নির্দিষ্ট ফসলের বৃদ্ধিতে সহায়ক।
আমরা একই সাথে বেশ কয়েকটি সমস্যার সমাধান করতে পারি। কার্বনের সমস্যা রয়েছে, খাদ্য নিরাপত্তার সমস্যা রয়েছে, এবং আমরা একটি পাথরের আঘাতে দুটি পাখি মারতে পারি।
হাইভজিও তাদের উৎপাদিত বায়োচারের মাধ্যমে কার্বন ক্রেডিটও বিক্রি করে, যা কোম্পানিগুলোকে তাদের কার্বন নিঃসরণ কমাতে সাহায্য করে। তাদের এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমিরাতে মটরশুঁটি, বাজরা, গম এবং ধানের মতো প্রধান শস্য উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ১০০ মিলিয়ন হেক্টর উর্বর জমি নষ্ট হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, হাইভজিও-এর এই উদ্ভাবন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তাদের পরীক্ষামূলক প্রকল্পে দেখা গেছে, এই মিশ্রণ ব্যবহার করে টমেটোর মতো ফসল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রায় এবং দ্রুত সময়ে ফলন দিয়েছে। বেলজিয়ামের ঘেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. মার্সেলো ফার্নান্দেজ দে সুজা এই প্রযুক্তির সম্ভাবনাকে সমর্থন করেন।
তবে, তিনি উল্লেখ করেন যে মরুভূমির মাটির পুনরুদ্ধার একটি জটিল প্রক্রিয়া এবং এতে সময় লাগতে পারে।
হাইভজিও-এর জন্য উৎপাদন বাড়ানো এবং বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে, তারা বিনিয়োগ সংগ্রহের চেষ্টা করছে এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে ১০,০০০ হেক্টর জমি পুনরুদ্ধার ও ১০ লক্ষ টন কার্বন ডাই অক্সাইড অপসারণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
হাইভজিও-এর এই প্রচেষ্টা বাংলাদেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। আমাদের দেশেও লবণাক্ততা, নদীভাঙন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জমির ক্ষয় হচ্ছে।
হাইভজিও-এর প্রযুক্তি যদি সফল হয়, তবে তা বাংলাদেশের কৃষি ও পরিবেশের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন