পোশাক শিল্পের জগতে আসছে নতুন এক পরিবর্তন, যেখানে মানুষের পরিবর্তে জায়গা করে নিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন মডেল বা এআই মডেল। উন্নত বিশ্বের ফ্যাশন কোম্পানিগুলো এরই মধ্যে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে শুরু করেছে, যা মডেলিংয়ের ধারণাটাই পাল্টে দিতে পারে। এই পরিবর্তনের ঢেউ কি এসে লাগবে আমাদের দেশেও?
সম্প্রতি, সুইডেনের ফ্যাশন ব্র্যান্ড এইচএন্ডএম (H&M) ঘোষণা করেছে যে তারা তাদের মার্কেটিং এবং সামাজিক মাধ্যমের কাজে ব্যবহারের জন্য ৩০ জন মডেলের এআই ‘যমজ’ তৈরি করবে। এই উদ্দেশ্যে তারা মডেলদের অনুমতিও নেবে। এইচএন্ডএম-এর প্রধান ক্রিয়েটিভ অফিসার ইয়োর্গেন অ্যান্ডারসন জানিয়েছেন, এই পদক্ষেপ তাদের সৃজনশীল প্রক্রিয়াকে আরও উন্নত করবে, তবে মানুষের উপর নির্ভরশীলতা তারা কমাবে না।
এই ঘোষণার পর ফ্যাশন জগতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকের আশঙ্কা, এর ফলে মডেলিংয়ের চিরাচরিত ধারণা বদলে যেতে পারে। হলিউডের শ্রমিকদের মতো, ফ্যাশন জগতের কর্মীরাও এই এআই মডেলিংয়ের কারণে তাদের কাজ হারানোর ঝুঁকিতে পড়ছেন। শুধু এইচএন্ডএম নয়, এর আগে লেভি’স (Levi’s) এবং হুগো বস (Hugo Boss)-এর মতো ব্র্যান্ডও এআই মডেল নিয়ে কাজ করেছে।
এই পরিবর্তনের কারণ হলো, প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং বাজারের চাহিদা। এআই মডেল তৈরি করা তুলনামূলকভাবে অনেক সাশ্রয়ী। এর মাধ্যমে পোশাক প্রস্তুতকারক এবং বিপণনকারীরা দ্রুত এবং সহজে বিভিন্ন ধরনের পণ্যের ছবি তৈরি করতে পারবে। একজন মডেলকে একাধিক স্থানে একই সময়ে পাওয়া সম্ভব হবে, যা আগে ছিল কল্পনাতীত।
তবে, এই পরিবর্তনের ফলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠছে। মডেলদের অধিকার এবং ক্ষতিপূরণ নিয়ে অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মডেল অ্যালায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা সারা জিফ বলছেন, ডিজিটাল যমজদের জন্য ন্যায্য ক্ষতিপূরণ কেমন হওয়া উচিত, তা এখনো পরিষ্কার নয়।
এদিকে, এআই মডেলিংয়ের কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে। অনেক ব্র্যান্ড মনে করে, এর মাধ্যমে তারা তাদের ওয়েবসাইটে আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ মডেল ব্যবহার করতে পারবে, যা গ্রাহকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হবে। ‘ল্যালাল্যান্ড এআই’ (Lalaland AI) নামক একটি কোম্পানি এই ধরনের এআই মডেল তৈরি করে, যাদের ক্লায়েন্টদের মধ্যে রয়েছে জনপ্রিয় ব্র্যান্ড যেমন – জ্যালান্ডো (Zalando)।
অন্যদিকে, এআই ব্যবহারের কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। তাইওয়ানের বংশোদ্ভূত একজন আমেরিকান মডেল, শেরিইন উ (Shereen Wu), অভিযোগ করেছেন যে এআই ব্যবহারের মাধ্যমে তার ত্বকের রঙ পরিবর্তন করা হয়েছে। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে, অনেক দেশেই এআই ব্যবহারের নিয়মকানুন তৈরির চেষ্টা চলছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে (EU) ২০২৬ সাল থেকে এআই দ্বারা তৈরি ছবিগুলোর উপর বিশেষ লেবেল লাগানোর নিয়ম চালু হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রযুক্তি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। মানুষের তৈরি করা মডেলদের আকর্ষণীয়তা এবং সৃজনশীলতা এখনো অপ্রতিদ্বন্দ্বী। অনেক ফ্যাশন সমালোচক মনে করেন, এআই মডেল হয়তো একসময় জনপ্রিয় হবে, তবে এটি মানুষের বিকল্প হতে পারবে না।
বাংলাদেশের ফ্যাশন শিল্পের জন্য বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশেও পোশাক শিল্প দ্রুত বাড়ছে। এই পরিবর্তনের ফলে, স্থানীয় মডেল, ডিজাইনার এবং পোশাক শ্রমিকদের উপর কেমন প্রভাব পড়বে, তা এখন দেখার বিষয়। এছাড়াও, এআই মডেল ব্যবহারের ফলে আমাদের দেশের ফ্যাশন শিল্পে নতুন সুযোগ তৈরি হবে কিনা, সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান