মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন (এফডিএ)-এর শীর্ষস্থানীয় ভ্যাকসিন কর্মকর্তা ড. পিটার মার্কস পদত্যাগ করেছেন। স্বাস্থ্য সচিব রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়রের সঙ্গে ভ্যাকসিন সংক্রান্ত ভুল তথ্য নিয়ে মতবিরোধের জের ধরে তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন।
এই ঘটনাটি দেশটির জৈব প্রযুক্তি শিল্পের উদ্বেগের কারণ হয়েছে, কারণ তারা মনে করে মার্কসের বিদায় বৈজ্ঞানিক মানকে দুর্বল করবে এবং নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির উদ্ভাবনে বাধা দেবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যখাতে এফডিএ’র ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সংস্থাটি ঔষধ এবং টিকার নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করে থাকে।
ড. মার্কস ২০১৬ সাল থেকে এফডিএ-তে ভ্যাকসিন বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। কোভিড-১৯ মহামারীর সময় ভ্যাকসিন তৈরিতে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
‘অপারেশন ওয়ার্প স্পিড’-এর মাধ্যমে দ্রুত ভ্যাকসিন তৈরি ও বিতরণে তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন, যা বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছিল।
ড. মার্কসের পদত্যাগপত্র মূলত স্বাস্থ্য সচিব রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়রের উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছিল। কেনেডি দীর্ঘদিন ধরে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং বিভিন্ন সময়ে ভুল তথ্য প্রচার করেছেন।
পদত্যাগপত্রে ড. মার্কস উল্লেখ করেছেন, সত্য ও স্বচ্ছতার পরিবর্তে কেনেডি তার ভুল তথ্যের প্রতি সমর্থন চেয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠিত ভ্যাকসিনের উপর আস্থা কমালে তা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হবে।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, বায়োটেকনোলজি ইনোভেশন অর্গানাইজেশন (বিআইও)-এর প্রধান জন ক্রাউলি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এফডিএ-তে অভিজ্ঞ নেতৃত্বের অভাব বৈজ্ঞানিক মানকে ক্ষুণ্ণ করবে। তিনি নতুন ও উন্নত চিকিৎসার উদ্ভাবন ব্যাহত হওয়ারও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
বিআইও-এর মতে, স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোতে শক্তিশালী নেতৃত্ব এবং উচ্চ বৈজ্ঞানিক মান বজায় রাখা অপরিহার্য।
অন্যদিকে, বিতর্কিত মন্তব্য ও কার্যক্রমের জন্য পরিচিত ড. মার্টিন মাকারিকে সম্প্রতি এফডিএ-এর কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিউ ইয়র্কের একজন স্নায়ু বিশেষজ্ঞ ড. জোনাথন হাওয়ার্ড মাকারির সমালোচনা করে বলেছেন, তিনি কোভিড-১৯ পরিস্থিতিকে হালকাভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন।
এই পরিস্থিতিতে, সিনেটর বিল ক্যাসিডি ড. মার্কসের পদত্যাগকে এফডিএ-এর জন্য একটি ক্ষতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি ড. মাকারি এবং সচিব কেনেডিকে বিজ্ঞান সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং পক্ষপাতহীন নেতৃত্ব দিতে সক্ষম এমন কাউকে নিয়োগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এই ঘটনার প্রভাব বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতেও পড়তে পারে। উন্নত বিশ্বে ভ্যাকসিনের মান এবং কার্যকারিতা নিয়ে কোনো ধরনের আপস হলে, তা বিশ্বব্যাপী টিকাদান কর্মসূচিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
বিশেষ করে, পোলিও, হাম, রুবেলা-র মতো প্রতিরোধযোগ্য রোগ নির্মূলে বাংলাদেশের যে প্রচেষ্টা, তাতেও এটি প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, ভ্যাকসিন এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার স্বচ্ছতা ও নির্ভরযোগ্যতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান