মিয়ানমারে যুদ্ধ: ভূমিকম্পে ত্রাণ কার্যক্রমে চরম বাধা!

গত শুক্রবার ৭.৭ মাত্রার এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে মিয়ানমার। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে দেশটির জনগণের দুর্দশা আরও বেড়েছে, কারণ সেখানে চলমান গৃহযুদ্ধ ত্রাণকার্যকে কঠিন করে তুলেছে।

ব্রিটিশ শাসন থেকে ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই দেশটি নানা যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়েছে।

ফেব্রুয়ারি ২০২১ সালে নির্বাচিত অং সান সু চি সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা দখলের পর থেকে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে শুরু হওয়া বিদ্রোহ বর্তমানে গৃহযুদ্ধের রূপ নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভূমিকম্পের ত্রাণ সরবরাহ একটি জটিল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

**বিদ্রোহীদের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা**

সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রধান প্রতিরোধ আন্দোলন ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে রবিবার থেকে দুই সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সময়ে তারা জাতিসঙ্ঘ (UN) এবং আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলোর (NGO) সঙ্গে মিলে কাজ করবে, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে নিরাপত্তা, পরিবহন এবং জরুরি চিকিৎসা শিবির স্থাপন করা যায়।

তারা আরও জানিয়েছে, তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে জরুরি ত্রাণ ও চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানের জন্য তারা আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।

সামরিক জান্তার পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

**সহায়তা বিতরণে সামরিক বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে শঙ্কা**

সামরিক সরকারের ত্রাণ বিতরণের রেকর্ড খুব একটা ভালো নয়। অতীতে দেখা গেছে, তারা প্রায়ই ত্রাণ সরবরাহকে বাধা দেয় বা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়।

উদাহরণস্বরূপ, ২০০৮ সালের ঘূর্ণিঝড় নার্গিসের সময় বিদেশি উদ্ধারকারী দল ও জরুরি ত্রাণ সহায়তা প্রবেশে তারা প্রথমে বাধা দেয়। এতে এক লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল এবং হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ হয়।

এমনকি বিদেশি সাহায্য গ্রহণ করতে রাজি হওয়ার পরেও, তারা নানা বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল।

২০২৩ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় মোচা আঘাত হানার পরও সামরিক বাহিনীর ত্রাণ কার্যক্রম ছিল অত্যন্ত ধীরগতির। তখনো বেসরকারি ত্রাণ কার্যক্রমে বাধা দেওয়া হয় এবং ক্ষয়ক্ষতির সম্পূর্ণ চিত্র প্রকাশ করতে দেওয়া হয়নি।

সরকারিভাবে ১৪৫ জন মৃতের খবর জানানো হলেও, স্বাধীন সূত্রে মৃতের সংখ্যা ৪০০ এর বেশি বলে জানা যায়।

**সংঘাতের মূল চরিত্রগুলো**

মিয়ানমারের সশস্ত্র সংঘাতের মূল চরিত্র হলো সামরিক বাহিনী এবং গণতন্ত্রপন্থী বিদ্রোহীরা। সামরিক বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে দেশটির শাসনক্ষমতায় রয়েছে। তারা সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার পর সশস্ত্র প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে।

এই প্রতিরোধ আন্দোলনে বিভিন্ন জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোও অংশ নিয়েছে, যারা বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন চায়।

এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিচ্ছে ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (NUG)। তাদের সশস্ত্র শাখা হলো পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (PDF)। পিডিএফে স্থানীয়ভাবে গঠিত বিভিন্ন প্রতিরোধ দল রয়েছে, যাদের অস্ত্রশস্ত্র কম থাকলেও তারা স্থানীয় পরিবেশে লড়াই করতে দক্ষ।

**অতীতে দুর্যোগে ত্রাণ বিতরণের অভিজ্ঞতা**

অতীতে দেখা গেছে, কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম সংঘাতপূর্ণ এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ২০০৪ সালের ভয়াবহ সুনামির পর ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে এমনটা দেখা গিয়েছিল।

মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে ত্রাণ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে দ্রুত সহায়তা পৌঁছে দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *