যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকা: ইসরায়েলের সামরিক অভিযান এবং মধ্যপ্রাচ্যে পরিবর্তনের ইঙ্গিত।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু প্রায়শই বলে থাকেন যে তিনি মধ্যপ্রাচ্যের “চেহারা” পরিবর্তন করছেন। তার মতে, এটি “পুনর্জন্মের যুদ্ধ”।
তবে গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান আরও জোরদার হওয়ায় এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা অব্যাহত থাকায়, এই পরিবর্তনের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত।
গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান: অচলাবস্থা নাকি দীর্ঘমেয়াদী দখলদারিত্ব?
গত কয়েক সপ্তাহে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী তাদের অভিযান আরও জোরদার করেছে। নেতানিয়াহু হামাসকে “পুরোপুরি পরাজিত” করার কথা বললেও, অনেক সামরিক বিশ্লেষক মনে করেন, এটি কেবল একটি স্লোগান।
যুদ্ধের সমাপ্তির পর গাজার ভবিষ্যৎ কী হবে, সে বিষয়ে ইসরায়েলের স্পষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেই। এমনকি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে গাজার শাসনভার তুলে দেওয়ার বিষয়েও তারা আগ্রহী নয়।
অবশ্য, নেতানিয়াহুর এই দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন। ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী জোটের অংশীদাররা এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানালেও, এটিকে বাস্তবায়িত করা কঠিন হতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদী দখলদারিত্বের আশঙ্কা:
গাজায় সামরিক অভিযানের কারণে সেখানকার সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজার প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দিচ্ছে, যার ফলে খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, গাজায় দীর্ঘমেয়াদী দখলদারিত্বের ফলে ইসরায়েলের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার হিসাব-নিকাশ:
গাজায় চলমান সংঘাতের কারণে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে, সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া বর্তমানে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
সৌদি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তারা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে না।
লেবানন, সিরিয়া ও পশ্চিম তীরে সামরিক তৎপরতা:
গাজার বাইরে, ইসরায়েল লেবানন, সিরিয়া এবং পশ্চিম তীরেও তাদের সামরিক তৎপরতা বাড়িয়েছে। লেবাননের সঙ্গে ইসরায়েলের সীমান্ত অঞ্চলে প্রায়ই উত্তেজনা দেখা যায়।
সিরিয়ায়ও ইসরায়েলি বাহিনী সামরিক অবকাঠামোতে হামলা চালিয়েছে। পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা সেখানকার ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছে।
ইরানের হুমকি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা:
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে একটি বড় হুমকি হিসেবে বিবেচনা করেন। তিনি প্রায়ই তেহরান সরকারের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার অভিযোগ করেন।
নেতানিয়াহু ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পেতে আগ্রহী। তবে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধানে আগ্রহী ছিলেন।
উপসংহার:
গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান মধ্যপ্রাচ্যে একটি বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে এই পরিবর্তনের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত।
অন্যদিকে গাজায় দীর্ঘমেয়াদী দখলদারিত্বের আশঙ্কা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ সত্ত্বেও, ইসরায়েল তার সামরিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। ভবিষ্যতে এর ফলস্বরূপ কী ঘটবে, সেদিকেই এখন সবার দৃষ্টি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন