ঘুম মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে শরীরের কার্যকারিতা কমে যায়, সেই বিষয়ে নতুন একটি গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, গভীর ঘুমের অভাব আলঝেইমার্স রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। স্নায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা পর্যাপ্ত সময় গভীর ঘুমে (slow-wave ও REM sleep) কাটান না, তাদের মস্তিষ্কের কিছু অংশে পরিবর্তন দেখা যায় যা আলঝেইমার্স রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।
গবেষণাটির প্রধান লেখক, ইয়েল স্কুল অফ মেডিসিনের গবেষক গ্যাওন চো বলেন, “আমরা দেখেছি, যাদের গভীর ঘুম কম হয়, তাদের মস্তিষ্কের ‘ইনফিরিয়র প্যারিয়েটাল অঞ্চল’-এর আকার ছোট হয়ে আসে।
এই অঞ্চলের কাজ হলো সংবেদী তথ্য বিশ্লেষণ করা। তাই এই অঞ্চলে নিউরোডিজেনারেশন (মস্তিষ্কের কোষের ক্ষয়) রোগের প্রাথমিক প্রভাব দেখা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম আলঝেইমার্স প্রতিরোধ ক্লিনিকগুলোর একজন প্রতিষ্ঠাতা, প্রতিরোধমূলক নিউরোলজিস্ট ড. রিচার্ড আইজ্যাকসন এই গবেষণার ফলাফলের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।
তিনি বলেন, “গভীর ঘুমের সঙ্গে মস্তিষ্কের কার্যকারিতার সম্পর্ক রয়েছে। পর্যাপ্ত ঘুম মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে।
গভীর ঘুমের সময় আসলে আমাদের মস্তিষ্কে কি ঘটে?
গভীর ঘুমের সময় মস্তিষ্ক দিনের বেলায় জমা হওয়া দূষিত পদার্থ ও মৃত কোষগুলো পরিষ্কার করে এবং শরীরকে পরের দিনের জন্য প্রস্তুত করে।
REM ঘুম (Rapid Eye Movement Sleep) পর্যায়ে আমরা স্বপ্ন দেখি, সেই সময় মস্তিষ্ক আবেগ প্রক্রিয়া করে, স্মৃতি তৈরি করে এবং নতুন তথ্য গ্রহণ করে। স্বাভাবিকভাবে শরীরের সঠিক কার্যক্রমের জন্য গভীর ও REM ঘুম অত্যন্ত জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। অন্যদিকে, কিশোর এবং শিশুদের আরও বেশি ঘুমের প্রয়োজন।
সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (US CDC)-এর তথ্য অনুযায়ী, আমেরিকায় প্রতি তিনজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজনের পর্যাপ্ত ঘুম হয় না।
গবেষকরা বলছেন, একজন সুস্থ মানুষের ঘুমের প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ গভীর ঘুম হওয়া উচিত।
ঘুমের এই একই হার REM ঘুমের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে ঘুমের এই হার কিছুটা কম হলেও শিশুদের ক্ষেত্রে এটি অনেক বেশি হতে দেখা যায়। এমনকি শিশুদের ঘুমের প্রায় ৫০ শতাংশই REM ঘুম থাকে।
গবেষক গ্যাওন চো’র মতে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গভীর ঘুমের পরিমাণও কমতে থাকে।
পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য ঘুমের সময় এবং ঘুমের পরিবেশ দুটোই গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণা বলছে, ঘুমের ভালো অভ্যাসের ফলে একজন পুরুষের জীবনকাল প্রায় পাঁচ বছর এবং একজন নারীর জীবনকাল প্রায় আড়াই বছর পর্যন্ত বাড়তে পারে।
এর জন্য রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সঠিক সময় এবং সকালে ঘুম থেকে ওঠার একটি নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলতে হবে।
ঘুমের মধ্যে জেগে ওঠা বা সপ্তাহে দু’বারের বেশি ঘুমোতে সমস্যা হওয়াও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
ঘুমের মান উন্নত করার কিছু উপায়:
- নিয়মিত ঘুমের সময়সূচী মেনে চলা উচিত।
- ঘুমের পরিবেশ আরামদায়ক করতে হবে, যেমন- ঘর ঠান্ডা ও অন্ধকার রাখা, শব্দ কমানো ইত্যাদি।
- ঘুমানোর আগে মদ্যপান করা এড়িয়ে চলা উচিত.
- ঘুমানোর আগে হালকা ব্যায়াম, মেডিটেশন বা আরামদায়ক কোনো কাজ করা যেতে পারে।
ডা. চো বলেন, “প্রত্যেকেই তাদের ঘুমের মান উন্নত করতে চেষ্টা করতে পারে। ঘুমের জন্য কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ নেই, তাই ঘুমের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা প্রয়োজন।