দক্ষিণ কোরিয়ায় ভয়াবহ দাবানল, মৃতের সংখ্যা ৩০।
দক্ষিণ কোরিয়ার পূর্বাঞ্চলে গত সপ্তাহে ভয়াবহ দাবানলে অন্তত ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি এবং একটি প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দিরসহ বহু স্থাপনা ভস্মীভূত হয়েছে।
দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দাবানলের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন তিন হাজারের বেশি মানুষ।
পুলিশের ধারণা, পঞ্চাশোর্ধ এক ব্যক্তি পারিবারিক সমাধিস্থলে কাজ করার সময় অসাবধানতাবশত আগুনের সূত্রপাত করেন। কোরিয়ার জাতীয় পুলিশ এজেন্সি সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে। সাধারণত বসন্ত ও শরৎকালে পরিবার বা পূর্বপুরুষদের সমাধিস্থল দেখাশোনার একটি ঐতিহ্য রয়েছে দেশটিতে, যা এই অঞ্চলে বেশ পরিচিত।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যায়, গত ২২শে মার্চ উত্তর গিয়ংসাং প্রদেশের উইসেং কাউন্টিতে ওই ব্যক্তির সমাধিস্থল দেখাশোনার সময় আগুনের সূত্রপাত হয়। এরপর তীব্র বাতাস পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তোলে, যার ফলশ্রুতিতে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
দাবানলে প্রায় ৪৮ হাজার হেক্টর এলাকা পুড়ে গেছে। দেশটির ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, সোমবারের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। উইসেং, আন্ডং, চিয়ংসং, ইয়ংইয়াং এবং ইয়ংডিওকসহ পাঁচটি এলাকাকে দুর্যোগপূর্ণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী বিশাল সংখ্যক সেনা ও হেলিকপ্টার মোতায়েন করেছে। ক্ষয়ক্ষতি কমাতে এগিয়ে আসে সেনাবাহিনী।
এর মধ্যে ছিল ৭,৫০০ সেনা সদস্য এবং ৪২০টির বেশি হেলিকপ্টার, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রেরও কয়েকটি হেলিকপ্টার ছিল। অগ্নিনির্বাপণ কাজে ১০ হাজারের বেশি দমকল কর্মী, পুলিশ ও সরকারি কর্মচারী মোতায়েন করা হয়েছিল।
আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ছিলেন সরকারি কর্মচারী এবং সাধারণ মানুষ। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন ষাটোর্ধ্ব।
অনেক বয়স্ক মানুষ দ্রুত পালাতে না পারায় অথবা পালাতে না চাওয়ায় প্রাণ হারান। এছাড়া, একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে একজন পাইলটও নিহত হয়েছেন।
উইসেং কাউন্টির ১,৩০০ বছরের পুরনো গউনসা মন্দিরটিও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোরীয় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জোগ্যে অর্ডারের ছবি অনুসারে, মন্দিরের ঘণ্টাটি ছাড়া প্রায় সবকিছুই পুড়ে গেছে।
তবে, ঐতিহাসিক স্থানটিতে থাকা কিছু মূল্যবান সামগ্রী, যেমন পাথরের তৈরি বুদ্ধমূর্তি, যা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মূল্যবান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, তা আগেভাগে অন্য মন্দিরে সরিয়ে নেওয়ায় রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী এবং ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হান ডাক-সু এই অগ্নিকাণ্ডকে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্যোগ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট উষ্ণ আবহাওয়া ও শক্তিশালী বাতাসের ফলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপক ক্ষতি করেছে।
হান আরও জানান, শুধু এই বছরই দক্ষিণ কোরিয়ায় ২৪৪টি দাবানলের ঘটনা ঘটেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় আড়াই গুণ বেশি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন