আতঙ্কে দেশ! ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ, কতটা ঝুঁকিপূর্ণ?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি: ঝুঁকিপূর্ণ এক পদক্ষেপ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এবং সাধারণ মানুষের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে, এমন এক সিদ্ধান্তের দিকে ঝুঁকছেন দেশটির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি তার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা লাভের সম্ভাবনা এবং দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে শুল্কের (ট্যারিফ) পুরোনো ধারণাকে নতুন করে কাজে লাগাতে চাইছেন।

ধারণা করা হচ্ছে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে তিনি এক সোনালী যুগের সূচনা করতে পারেন। তবে সবকিছু এখনো অনিশ্চিত, কারণ ট্রাম্পের সিদ্ধান্তগুলো অনেক সময়ই অপ্রত্যাশিতভাবে পরিবর্তন হয়।

যদি সবকিছু পরিকল্পনা মতো হয়, তাহলে আসন্ন “মুক্তি দিবস”-এ তিনি সেইসব দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করবেন, যারা মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক বসায়। ট্রাম্পের এই সাহসী পদক্ষেপ বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে পারে, যা সম্ভবত সকল আমেরিকানের জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলবে।

পরিবারের বাজেট যেখানে কঠিন হয়ে পড়েছে, সেখানে পণ্যের দাম বাড়তে পারে। তবে ট্রাম্প চাইছেন, সবাই যেন এই কৌশলের প্রতি সমর্থন জানায়, যা ভবিষ্যতের জন্য সুবিধা বয়ে আনবে, যদিও এর জন্য কিছু সময়ের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হতে পারে।

ইতিমধ্যে, ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ নীতি বাজারের অস্থিরতা তৈরি করেছে। শেয়ার বাজারে কয়েক ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে, এবং অর্থনৈতিক মন্দা (recession) নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে।

এছাড়া, মার্কিন মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়েছে, যা পশ্চিমা জোটের মধ্যে ফাটল ধরাতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাণিজ্য যুদ্ধ অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে কিছু দেশ বা শিল্প সম্ভবত নতুন শুল্ক থেকে ছাড় পেতে পারে।

এই ধরনের নীতিনির্ধারণের ফলে অর্থনীতির ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে।

ট্রাম্পের যুক্তি হলো, আমদানি শুল্ক আরোপের মাধ্যমে তিনি কোম্পানিগুলোকে পুনরায় উৎপাদন ও সরবরাহ শৃঙ্খল আমেরিকায় ফিরিয়ে আনতে বাধ্য করবেন, যা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং বিশ্বায়নের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোর উন্নতি ঘটাবে।

তবে, এর ফলে ভোক্তাদের জন্য পণ্যের দাম বাড়তে পারে। উৎপাদন যদি সত্যিই আমেরিকায় ফিরে আসে, তবে এতে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে।

ফলে, ট্রাম্পের ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও এর প্রভাব বিদ্যমান থাকতে পারে।

ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ রাজনৈতিকভাবেও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কারণ, অর্থনৈতিক মন্দা এবং তাঁর নীতির কারণে রিপাবলিকানদের মধ্যে এরই মধ্যে অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে।

এই নীতির কারণে গাড়ির দামও বাড়তে পারে। কারণ, উৎপাদন প্রক্রিয়া মেক্সিকো এবং কানাডার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।

এর মানে হলো, যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি হওয়া অনেক গাড়ির দাম বাড়বে। যদিও ভবিষ্যতে অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদিত গাড়ির ওপর শুল্কের প্রভাব নাও পড়তে পারে, তবে উৎপাদন খরচ এবং অবকাঠামো তৈরি করতে যে বিনিয়োগ প্রয়োজন, তা শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।

ট্রাম্পের শুল্ক নীতির প্রতি আস্থাশীলতা মূলত তাঁর ‘বিজয়ী ও পরাজিত’ বিষয়ক বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গির ফল। তিনি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপ ও এশিয়ার দেশগুলোর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যারা তাদের শিল্পকে সুরক্ষা দেয়।

অতীতেও শুল্ক নীতি ছিল, কিন্তু অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন, ১৯৩০-এর দশকের মহামন্দার কারণ ছিল এই ধরনের বাণিজ্যনীতি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বাণিজ্য বাধা ধীরে ধীরে কমে আসে, কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে বিশ্ব বাণিজ্যে আবার নতুন পরিবর্তন আসে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্ক আরোপের ফলে পণ্যের দাম বাড়ে, কারণ আমদানিকারকরা অতিরিক্ত শুল্কের বোঝা ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভোটারদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।

যদিও মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা কমেছে, তবে জীবনযাত্রার খরচ এখনো আগের অবস্থায় ফিরে আসেনি।

ট্রাম্পের লক্ষ্য হলো, যেসব অঞ্চলে কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, সেখানকার অর্থনৈতিক সম্ভাবনা পুনরুদ্ধার করা। বিশ্বায়নের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক পরিবর্তন অনেক মানুষের জীবনকে কঠিন করে তুলেছে।

তাঁর প্রশাসন বলছে, এই নীতি সেইসব অঞ্চলের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনবে।

তবে, অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ বাস্তবসম্মত নাও হতে পারে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ক্ষমতা এখন পরিষেবা শিল্প, প্রযুক্তি, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর নির্ভরশীল।

ট্রাম্পের এই নীতি কতটুকু সফল হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ, তাঁর সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অস্থিরতা দেখা যায়। যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনাস্থা তৈরি করতে পারে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *