একজন শিল্পী যিনি ডিজিটাল জগতের সীমানা অতিক্রম করে মানুষের ভেতরের অনুভূতিগুলো ক্যামেরাবন্দী করেন, তাঁর নাম এড অ্যাটকিন্স। তাঁর কাজ একইসঙ্গে কৌতুকপূর্ণ, ভীতিকর এবং বিশেষভাবে আলোড়ন সৃষ্টিকারী।
লন্ডনের টেট ব্রিটেনে তাঁর কাজের প্রদর্শনী হতে চলেছে, যেখানে তাঁর জীবনের নানা দিক উন্মোচিত হবে।
অ্যাটকিন্সের শৈশব কেটেছে ইংল্যান্ডের স্টোনসফিল্ডে। শিল্পী হিসেবে তাঁর বেড়ে ওঠার পেছনে ছিল বাবা-মায়ের অনুপ্রেরণা।
তাঁর বাবা ছিলেন একজন গ্রাফিক শিল্পী এবং মা ছিলেন চিত্রকলার শিক্ষক। ডিজিটাল আর্টের এই জগতে তিনি পরিচিত মুখ, যিনি প্রায়শই সিজিআই অবতার ব্যবহার করে নিজের ভেতরের কথা প্রকাশ করেন।
শিল্পী এড অ্যাটকিন্সের কাজগুলো দর্শকদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে। তাঁর কাজে শোক, একাকীত্ব এবং মানুষের ভেতরের জটিলতাগুলো বিশেষভাবে ফুটে ওঠে।
২০১৬ সালে তাঁর বাবার ক্যান্সার ধরা পড়ার পর, তিনি এই বিষয়টিকে গভীরভাবে অনুভব করেন। বাবার মৃত্যুর পর তাঁর কাজগুলোতে এই শোকের ছায়া আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
তাঁর বিখ্যাত কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ‘রিबनস’। এই কাজে তিনি ‘ডেভ’ নামের একজন ট্যাটু করা, খালি গায়ের ধূমপায়ী চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যিনি র্যান্ডি নিউম্যানের গান গেয়েছেন।
এছাড়াও, ‘পিয়ানোওয়ার্ক ২’ তে তিনি নিজের একটি ‘আনক্যানি ভ্যালি’ সংস্করণ তৈরি করেছেন। যেখানে ভার্চুয়াল অ্যাটকিন্সকে সুইস সঙ্গীতশিল্পী জুরগ ফ্রের একটি পরীক্ষামূলক সুর তোলার চেষ্টা করতে দেখা যায়।
এই ধরনের কাজগুলো দর্শকদের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি করে।
অ্যাটকিন্সের কাজগুলোতে প্রায়ই গভীর দার্শনিকতা এবং ব্যক্তিগত অনুভূতির প্রকাশ দেখা যায়। তাঁর ছবিতে কবিতার পংক্তি, সংক্ষিপ্ত শিরোনাম এবং অপ্রত্যাশিত শব্দ ব্যবহার করা হয়, যা দর্শকদের মনে এক ভিন্ন জগৎ তৈরি করে।
তাঁর আসন্ন প্রদর্শনীতে ডিজিটাল শিল্পকর্মের পাশাপাশি, থাকবে সেলফ-পোর্ট্রেট, টেক্সট পিস, এমব্রয়ডারি এবং একটি বিশেষ ‘পোস্ট-ইট নোট’-এর সিরিজ, যা তিনি তাঁর মেয়ের টিফিনের জন্য তৈরি করেছিলেন।
এছাড়াও, তাঁর বাবার ক্যান্সার ডায়রি থেকে নেওয়া একটি ২ ঘণ্টার চলচ্চিত্রও প্রদর্শিত হবে, যেখানে অভিনেতা টবি জোন্স তাঁর বাবার শেষ মাসগুলোর কথা পাঠ করেছেন।
অ্যাটকিন্স সম্প্রতি ‘ফ্লাওয়ার’ নামে একটি স্মৃতিকথা লিখেছেন, যেখানে তিনি তাঁর জীবনের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন। এটি তাঁর ব্যক্তিগত অনুভূতি এবং উদ্বেগের একটি উন্মুক্ত প্রকাশ।
বইটিতে তিনি তাঁর শক্তিশালী মুত্রাশয়, ফার্মেসি থেকে কেনা খাবার এবং দামি ওয়াইন চুরির কৌশলের মতো ব্যক্তিগত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন।
বর্তমানে কোপেনহেগেনে বসবাস করা এই শিল্পী তাঁর সন্তানদের ভালোবাসেন। তাঁর মতে, সন্তানের জন্ম সম্ভবত জীবনের অন্যরকম একটি দিক, এবং তাঁর সেরা কাজগুলো তাদের জন্মেরও পরে তৈরি হয়েছে।
অ্যাটকিন্সের কাজগুলো ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষের ভেতরের গভীর অনুভূতিগুলো প্রকাশ করে। তিনি প্রায়ই বলেন, প্রযুক্তি কখনোই মানুষের অনুভূতির সম্পূর্ণ প্রতিরূপ তৈরি করতে পারবে না।
তাঁর মতে, মানুষের ভেতরের জগৎ, যা এত জটিল, তা সম্ভবত কোনো যন্ত্রের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়।
টেট ব্রিটেনে ২ এপ্রিল থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান