যুদ্ধাপরাধ, পলাতক নাৎসি এবং পিনোশে: ফিলিপ স্যান্ডসের নতুন বইয়ে উন্মোচন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার বহু বছর পরও নাৎসি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং তাদের সহযোগীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা আজও চলছে। সম্প্রতি খ্যাতিমান লেখক ফিলিপ স্যান্ডস তার নতুন বই ‘৩৮ লোনড্রেস স্ট্রিট’-এ তুলে ধরেছেন এমনই এক চাঞ্চল্যকর কাহিনি।
বইটিতে একদিকে যেমন নাৎসি বাহিনীর কুখ্যাত সদস্য ওয়াল্টার রাউফের চিলিতে পালিয়ে আসার প্রেক্ষাপট বর্ণিত হয়েছে, তেমনই উন্মোচন করা হয়েছে চিলির স্বৈরশাসক অগাস্তো পিনোশের শাসনামলে সংঘটিত বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা।
বইটি মূলত তিনটি অংশে বিভক্ত একটি সিরিজের শেষ সংস্করণ। এর আগে ‘ইস্ট ওয়েস্ট স্ট্রিট’ এবং ‘দ্য র্যাটলাইন’ বই দুটি প্রকাশিত হয়েছিল।
‘ইস্ট ওয়েস্ট স্ট্রিট’-এ লেখক ইউক্রেনের শহর লভিভের ইহুদি জনগোষ্ঠীর ওপর নাৎসিদের অত্যাচারের কথা উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে ‘দ্য র্যাটলাইন’-এ নাৎসি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অটো ফন ভ্যাখটারের রহস্যজনক মৃত্যু এবং দক্ষিণ আমেরিকায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
‘৩৮ লোনড্রেস স্ট্রিট’ বইটিতে প্রধান চরিত্র হিসেবে উঠে এসেছেন ওয়াল্টার রাউফ। রাউফ ছিলেন একজন এসএস কমান্ডার, যিনি গ্যাস চেম্বার তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং ৯০ হাজারের বেশি ইহুদির মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিলেন।
যুদ্ধের পর তিনি ইতালির একটি বন্দীশিবির থেকে পালিয়ে প্রথমে সিরিয়ায় আশ্রয় নেন। সেখানে তিনি সিরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থাকে পুনর্গঠনে সহায়তা করেন। এরপর ইসরায়েলের হয়েও তিনি গুপ্তচরবৃত্তি করেছেন।
পরে চিলিতে পালিয়ে গিয়ে তিনি দেশটির স্বৈরশাসক পিনোশের ঘনিষ্ঠ হন এবং তার শাসনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। বইটিতে রাউফের জীবন এবং পিনোশের ক্ষমতা লাভের বিষয়টি ঘনিষ্ঠভাবে চিত্রিত করা হয়েছে।
বইটিতে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, কিভাবে পিনোশের শাসনামলে লোনড্রেস স্ট্রিটের একটি ভবনকে জিজ্ঞাসাবাদের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো, যেখানে বন্দীদের ওপর চালানো হতো অকথ্য নির্যাতন।
লেখক স্যান্ডস, যদিও নাৎসি এবং পিনোশে—উভয়কেই সরাসরি খারাপ মানুষ হিসেবে চিত্রিত করেননি, তবে তাদের কাজকর্মের ভয়াবহতা স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, কিভাবে রাউফ এবং পিনোশের মতো ব্যক্তিরা তাদের কৃতকর্মের জন্য কোনো বিচার পাননি।
বইটিতে পিনোশের ১৯৮৮ সালে লন্ডনে গ্রেপ্তার এবং স্পেনের আদালতে বিচারের মুখোমুখি করার বিষয়গুলোও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। যদিও স্বাস্থ্যগত কারণে তাকে চিলিতে ফেরত পাঠানো হয়।
লেখক এখানে পিনোশের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন, যা পাঠকের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
এই বইয়ের মাধ্যমে লেখক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং চিলির ইতিহাসের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উন্মোচন করেছেন।
একদিকে যেমন নাৎসি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে, তেমনই পিনোশের শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোও সুস্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
লেখক দেখিয়েছেন, কিভাবে অপরাধীরা প্রায়শই আইনের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।
এই বিষয়টি সারা বিশ্বের মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান