আতঙ্কে রাফাহবাসী! ইসরায়েলের সেনা নির্দেশ, শহর ছাড়তে হবে?

গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর অভিযান জোরদারের ইঙ্গিত, রাফাহ থেকে সরানোর নির্দেশ।

গাজা উপত্যকার একেবারে দক্ষিণে অবস্থিত রাফাহ শহর থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। এই নির্দেশের মাধ্যমে শহরটিতে ব্যাপক সামরিক অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের দিনে এই নির্দেশ আসায় সেখানকার মানুষের মধ্যে চরম উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পরেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো। গত কয়েক মাস ধরেই গাজায় খাদ্য, জ্বালানি ও জরুরি ঔষধ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। এর ফলে প্রায় ২০ লক্ষ ফিলিস্তিনি চরম মানবিক সংকটে পড়েছেন।

সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাফাহ শহরের অধিকাংশ এলাকা খালি করে বাসিন্দাদের উপকূলের কাছে অবস্থিত মুওয়াসিতে যেতে হবে। মুওয়াসি এলাকার পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ। সেখানে উদ্বাস্তুদের জন্য তৈরি হওয়া অস্থায়ী শিবিরগুলোতে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা খুবই কম।

গত বছরের মে মাসেও ইসরায়েলি বাহিনী রাফায় বড় ধরনের অভিযান চালিয়েছিল। এতে শহরের একটা বড় অংশ ধ্বংস হয়ে যায়। তারা মিশর সীমান্তবর্তী রাফাহ ক্রসিং-এর নিয়ন্ত্রণও নিয়ে নেয়, যা গাজার একমাত্র প্রবেশদ্বার, যা ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হামাসের সঙ্গে হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে ওই করিডোর থেকে ইসরায়েলের সেনা সরিয়ে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইসরায়েল তা মানতে রাজি হয়নি। তাদের যুক্তি ছিল, অস্ত্র চোরাচালান বন্ধ করতে এটি জরুরি।

ইসরায়েলের দাবি, হামাস এখনও তাদের জিম্মায় থাকা ৫৯ জন জিম্মিকে মুক্তি দিক। তাদের মধ্যে ২৪ জন এখনো জীবিত আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়াও, হামাসকে অস্ত্র সমর্পণ করে গাজা ছাড়তে হবে। যদিও হামাস এই শর্ত মানতে রাজি নয়। তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী জিম্মিদের মুক্তি এবং ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে।

অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি বলেছেন, যুদ্ধের পর গাজার নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করেন, যেখানে গাজার বাসিন্দাদের অন্য দেশে “স্বেচ্ছায়” পুনর্বাসিত করার কথা বলা হয়েছে। ফিলিস্তিনিরা এই প্রস্তাবকে তাদের ভূমি থেকে বিতাড়িত করার চক্রান্ত হিসেবে দেখছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও মনে করে, এটি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালায়। এতে প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই ছিলেন বেসামরিক নাগরিক। হামাস জঙ্গিরা প্রায় ২৫১ জনকে জিম্মি করে। পরে যুদ্ধবিরতি এবং অন্যান্য চুক্তির মাধ্যমে তাদের অনেককে মুক্তি দেওয়া হয়।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০,০০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। হতাহতের মধ্যে কতজন বেসামরিক নাগরিক এবং কতজন যোদ্ধা, তা এখনো স্পষ্ট নয়। যুদ্ধের কারণে গাজার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। গাজার বিশাল এলাকা সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং কবে নাগাদ এর পুনর্গঠন সম্ভব হবে, তা এখনো অনিশ্চিত।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *