মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি কয়েকজন কলেজ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের আটকের ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, ফেডারেল এজেন্টরা অভিবাসন নীতির কড়াকড়ির অংশ হিসেবে তাদের আটক করেছে।
যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকে হয় যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতিপ্রাপ্ত, না হয় অস্থায়ী ভিসা নিয়ে সেখানে অবস্থান করছিলেন। মূলত ফিলিস্তিনপন্থী ছাত্র আন্দোলন এবং ইসরায়েল নীতির সমালোচকদের লক্ষ্য করেই এই ধরপাকড় চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আটককৃতদের মধ্যে অন্যতম হলেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও পাবলিক অ্যাফেয়ার্স স্কুলের সাবেক ছাত্র মাহমুদ খলিল। তিনি ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।
গত ৮ই মার্চ তাকে আটক করে লুইজিয়ানার একটি ডিটেনশন সেন্টারে নেওয়া হয়। তার আইনজীবীর দাবি, ট্রাম্প প্রশাসন খলিলের গ্রিন কার্ড বাতিল করেছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, খলিল হামাসের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং তিনি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ। তবে আইনজীবীরা এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলছেন।
আরেকজন হলেন, জর্джটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলার বাদার খান সুরি। তিনি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করেন। মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে ভার্জিনিয়া থেকে তাকে আটক করা হয়।
তার জে-১ ভিসা বাতিল করা হয়েছে। দেশটির হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের মুখপাত্রের অভিযোগ, খান সুরি হামাসের প্রচারণা চালাতেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইহুদিবিদ্বেষ ছড়াতেন।
এছাড়া, তার সঙ্গে হামাসের একজন উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলেও তারা দাবি করেছেন। বাদার খান সুরির আইনজীবী বলছেন, তার মক্কেলকে ফিলিস্তিন-সংক্রান্ত মন্তব্যের কারণে টার্গেট করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, তুফ্টস বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি শিক্ষার্থী রুমিসা ওজতুর্ককেও আটকের ঘটনা ঘটেছে। মার্চ মাসের শেষের দিকে রমজান মাসের ইফতারের জন্য যাওয়ার সময় তাকে আটক করে পুলিশ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট সুনীল কুমার এই ঘটনাকে ‘উদ্বেগজনক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। রুমিসা ওজতুর্ক একটি পত্রিকায় নিবন্ধ লিখেছিলেন, যেখানে তিনি গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য ছাত্র ইউনিয়নের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সচিব মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, এখন থেকে ভিসাপ্রার্থীদের ওপর আরও কড়া নজরদারি করা হবে। এমনকি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের গতিবিধির ওপরও খেয়াল রাখা হবে।
যারা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত, তাদের ভিসা বাতিল করা হবে বলেও তিনি জানান। এই ঘটনার জেরে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, ভিন্নমত দমনের উদ্দেশ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন আন্তর্জাতিক স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীকেও আটকের খবর পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে এই ঘটনাকে গভীর উদ্বেগের বিষয় বলে উল্লেখ করেছে।
তবে, ওই শিক্ষার্থীর নাম প্রকাশ করা হয়নি। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের নেতারা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং এর কারণ জানতে চেয়েছেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন