ট্রাম্পের রাশিয়া নীতির পরিবর্তন: পুতিনের উপর চাপ সৃষ্টি করতে কি পারবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক?
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ইউক্রেন নীতি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে নিয়ে পুতিনের প্রশ্ন তোলাটা তাকে “ক্ষুব্ধ” করেছে।
এই মন্তব্যের পরেই ট্রাম্প রাশিয়ার তেলের উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন, যদি না ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠিত হয়।
ট্রাম্পের এই নতুন অবস্থান আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তার এই পদক্ষেপ কি রাশিয়ার উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারবে, নাকি এটি নিছকই কথার কথা?
অনেকের মনে এই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কারণ অতীতেও ট্রাম্প বিভিন্ন সময় রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের কথা বললেও, শেষ পর্যন্ত তেমনটা ঘটেনি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই “সেকেন্ডারি শুল্ক” (secondary tariffs) আরোপের হুমকি বাস্তবায়িত হলে, তা বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।
বিশেষ করে, যে দেশগুলো রাশিয়া থেকে তেল কেনে, তাদের উপর এর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। এর মধ্যে চীন ও ভারতের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
এই দেশগুলো রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কিনে থাকে।
যদি ট্রাম্প সত্যিই রাশিয়ার তেলের উপর শুল্ক আরোপ করেন, তাহলে চীন ও ভারতের মতো দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হবে।
কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তাদের পণ্য রপ্তানিতেও শুল্কের বোঝা বাড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ, চীন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রকে বিপুল পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করে, যা তাদের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
একইভাবে, ভারতও যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় রপ্তানি বাজার।
অন্যদিকে, তুরস্কের মতো দেশগুলোও রাশিয়ার তেলের উপর নির্ভরশীল। সুতরাং, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
তবে, তুরস্কের ক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম হবে।
যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আসছে, যারা রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করে।
এই ধরনের নিষেধাজ্ঞাকে “সেকেন্ডারি স্যাংশন” (secondary sanctions) বলা হয়। যেমন, ইরানের তেল বা রাশিয়া থেকে সামরিক সরঞ্জাম কেনা হলে, সংশ্লিষ্ট দেশ, কোম্পানি বা ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার শিকার হতে পারে।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।
কারণ, রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল উৎপাদনকারী দেশ। ফলে, রাশিয়ার তেল সরবরাহ ব্যাহত হলে, বিশ্বজুড়ে তেলের দাম বাড়তে পারে।
বর্তমানে, ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরের আলোচনা চলছে।
তবে, রাশিয়া এখনো পর্যন্ত এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি।
রাশিয়ার আশঙ্কা, যুদ্ধবিরতির সুযোগে ইউক্রেন পশ্চিমা দেশগুলো থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে পুনরায় যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে পারে।
তবে, ট্রাম্পের এই নতুন নীতি কতটুকু কার্যকর হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
কারণ, অতীতে তিনি বিভিন্ন সময় রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের কথা বললেও, শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি।
ফলে, অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে, ট্রাম্পের এই হুমকি কি কেবল কথার কথা, নাকি এর পেছনে অন্য কোনো কৌশল কাজ করছে?
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা