মার্কিন অর্থনীতিতে অশনি সংকেত! মন্দার ঝুঁকিতে দেশ, জানাচ্ছে গোল্ডম্যান স্যাক্স

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসন্ন মন্দার ঝুঁকি বাড়ছে, আশঙ্কা প্রকাশ করছে গোল্ডম্যান স্যাক্স। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের এই সম্ভাব্য মন্দা পরিস্থিতি কিভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

গোল্ডম্যান স্যাক্স-এর মতে, আগামী এক বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা আসার সম্ভাবনা ৩৫ শতাংশে পৌঁছেছে, যা আগে ছিল ২০ শতাংশ। বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে শুল্ক বৃদ্ধির আশঙ্কা এই উদ্বেগের প্রধান কারণ।

এর ফলস্বরূপ, মার্কিন অর্থনীতিতে ধীরগতি, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি এবং বেকারত্ব বাড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির কারণে ইতিমধ্যে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা কমেছে। ভোক্তাদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে চরম অনিশ্চয়তা।

সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, দেশটির নাগরিকদের মধ্যে বেকারত্ব বৃদ্ধির আশঙ্কা বাড়ছে, যা মহামন্দার সময় দেখা গিয়েছিল। একইসঙ্গে, মূল্যস্ফীতিও গত ৩২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

গোল্ডম্যান স্যাক্স আশঙ্কা করছে, শুল্ক বৃদ্ধি হলে তা ভোক্তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করবে এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দেবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। কারণ, এর সরাসরি প্রভাব পড়বে বাণিজ্য এবং প্রবাসী আয়ে।

  • রপ্তানি হ্রাস: বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি গন্তব্যগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম। মার্কিন অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়লে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্যের চাহিদা কমতে পারে, যা রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
  • প্রবাসী আয়ে প্রভাব: যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্স কমে যেতে পারে, যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  • বৈদেশিক বিনিয়োগে প্রভাব: অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বিনিয়োগ করতে দ্বিধা বোধ করতে পারেন, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
  • ডলারের মূল্যবৃদ্ধি: বিশ্ববাজারে ডলারের চাহিদা বাড়লে, টাকার বিপরীতে এর মূল্য আরও বাড়তে পারে, যা আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি করবে এবং মূল্যস্ফীতিকে আরও উস্কে দেবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। রপ্তানি বাজার বহুমুখীকরণ এবং নতুন বাণিজ্য চুক্তি করার মাধ্যমে ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।

অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানো এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির দিকেও মনোযোগ দিতে হবে। এছাড়াও, প্রবাসী আয়ের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে, অন্যান্য খাতে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করতে হবে।

গোল্ডম্যান স্যাক্সের এই পূর্বাভাস বিশ্বে অর্থনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়াতে পারে। বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের উচিত হবে, সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো বিবেচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *