মায়ানমারে ভূমিকম্পের রেশ ধরে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে একটি নির্মাণাধীন বহুতল ভবন ধসে পড়ার ঘটনায় এখনো পর্যন্ত ৭৮ জন শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধারে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা।
তবে জীবিতদের উদ্ধারের সময়সীমা ফুরিয়ে আসছে, কারণ ঘটনার পর ৭২ ঘণ্টা পার হয়ে গেছে। খবর সূত্রে জানা গেছে, ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।
শুক্রবার (স্থানীয় সময়) মিয়ানমারে ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর কম্পন অনুভূত হয় প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডেও।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল থেকে প্রায় ১,২৮৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ব্যাংককে নির্মাণাধীন ভবনটি ধসে পড়ার কারণ অনুসন্ধানে নেমেছে কর্তৃপক্ষ।
ভবনটি ছিল একটি সরকারি নিরীক্ষা অফিসের নির্মাণাধীন কাঠামো। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের সময় ভবনটি সামান্য কেঁপে ওঠে এবং এর পরেই তা ভেঙে পড়ে।
ঘটনার আকস্মিকতায় আতঙ্কিত হয়ে মানুষজন ছোটাছুটি করতে শুরু করে। ধ্বংসস্তূপের চারিদিকে তখন শুধু উড়ন্ত ধুলো আর মানুষের আর্তনাদ শোনা যাচ্ছিলো।
নিখোঁজ শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যরা প্রিয়জনদের জন্য গভীর উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন। তাঁদের একজন হলেন নারীউমন থংলেক।
তিনি জানিয়েছেন, তাঁর দীর্ঘদিনের সঙ্গী, তাঁর ছেলে এবং আরও চার বন্ধু এই ভবনে কাজ করতেন। ঘটনার পর থেকে তাঁদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে না পারায় তিনি দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
নারীউমন জানান, তিনি তাঁর সঙ্গীকে অনেকবার ফোন করেছেন, বার্তা পাঠিয়েছেন, কিন্তু কোনো সাড়া পাননি। তাঁর ধারণা, তাঁরা সবাই হয়তো ভবনের ভেতরে আটকা পড়েছেন।
চানপেন কাওনই নামের আরেকজন নারী তাঁর মা এবং ছোট বোনকে খুঁজছেন। তাঁরাও এই নির্মাণ সাইটে কাজ করতেন।
দুর্ঘটনার পর এক প্রত্যক্ষদর্শীর কাছ থেকে তিনি জানতে পারেন, তাঁর মা ও বোন পাঁচ তলার ওপর ছিলেন। ওই ব্যক্তি জানান, তাঁরা পঞ্চম তলা থেকে দৌড়ে নামার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু এর মধ্যেই ভবনটি ভেঙে পড়ে।
ব্যাংককের ডেপুটি গভর্নর তাভিদা কামলভেজ জানিয়েছেন, উদ্ধারকর্মীরা দ্রুতগতিতে কাজ করছেন। তিনি বলেন, “এখন প্রতিটি মুহূর্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
শহরের মেয়র চাড chart সিতিপান্ত এই ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি রাজধানীর সব বহুতল ভবনের নিরাপত্তা পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন।
ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট এই ভয়াবহ বিপর্যয়ের পর নির্মাণ শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও ব্যাংককের ভবনগুলোর মান নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
কারণ, থাইল্যান্ডে বহু বিদেশি শ্রমিক কাজ করেন, তাঁদের জীবন ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
নিখোঁজ শ্রমিকদের পরিবার পরিজনদের একটাই আকুতি, তাঁদের প্রিয়জনদের যেন দ্রুত উদ্ধার করা যায়।
জীবিত উদ্ধারের ক্ষীণ আশা নিয়ে তাঁরা এখনো ধ্বংসস্তূপের পাশে অপেক্ষা করছেন।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস