যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে বিরল খনিজ পদার্থ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবিত চুক্তি থেকে সরে আসার চেষ্টা করার অভিযোগ করেছেন। এই চুক্তি স্বাক্ষর না করলে জেলেনস্কিকে ‘বড় ধরনের সমস্যা’র সম্মুখীন হতে হবে বলেও তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।
রবিবার এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, “আমি দেখছি, তিনি (জেলেনস্কি) বিরল মৃত্তিকা বিষয়ক চুক্তি থেকে পিছিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। যদি তিনি তা করেন, তবে তার কিছু সমস্যা হবে। বড়, খুবই বড় সমস্যা।” ট্রাম্প আরও বলেন, “আমরা বিরল মৃত্তিকা নিয়ে একটি চুক্তি করেছিলাম এবং এখন তিনি বলছেন, ‘আচ্ছা, আপনি জানেন, আমি চুক্তিটি পুনর্মূল্যায়ন করতে চাই।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি গত সপ্তাহে জানান, প্রস্তাবিত চুক্তির শর্তগুলো “constantly changing” বা ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে। তবে সামগ্রিকভাবে, ইউক্রেন ভবিষ্যৎ চুক্তির ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। তিনি আরও জানান, উভয় দেশ একটি “ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট” বা কাঠামো চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল এবং পরে বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তিতে পৌঁছানোর কথা ছিল। এই চুক্তিতে ইউক্রেনীয় পার্লামেন্টে আরও গবেষণা ও অনুমোদনের প্রয়োজন ছিল।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এখন সরাসরি “পূর্ণাঙ্গ চুক্তি” করার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।
জেলেনস্কি বলেন, “চুক্তিটি নিয়ে এখনই কথা বলাটা খুব তাড়াতাড়ি হবে, কারণ এটি কয়েকবার পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে আমি চাই না যুক্তরাষ্ট্র মনে করুক যে ইউক্রেন সাধারণভাবে এর বিরুদ্ধে।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা ধারাবাহিকভাবে আমাদের ইতিবাচক সংকেত দেখাচ্ছি। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
জানা গেছে, ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকের পর খনিজ পদার্থ বিষয়ক প্রাথমিক চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়নি। তবে, সম্প্রতি প্রাকৃতিক সম্পদ সংক্রান্ত একটি নতুন প্রস্তাবের মাধ্যমে এটি পুনরায় আলোচনায় এসেছে। এই প্রস্তাব অনুযায়ী, ইউক্রেনের বিরল মৃত্তিকা খনিজ পদার্থের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরও বেশি প্রবেশাধিকার থাকবে।
প্রস্তাবটি নিয়ে উদ্বেগের কারণ হলো, এতে ইউক্রেনীয় উদ্যোগগুলোকে একটি যৌথ মার্কিন-ইউক্রেনীয় বিনিয়োগ তহবিলে অবদান রাখতে বলা হয়েছে। এই তহবিলের পরিচালনা পর্ষদে ওয়াশিংটনের তিনজন এবং কিয়েভের দুজন সদস্য থাকবেন। অনেকে মনে করছেন, এর মাধ্যমে ইউক্রেন তাদের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দেবে।
ট্রাম্প প্রশাসন মনে করে, প্রস্তাবিত খনিজ চুক্তিটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইউক্রেনে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হবে। এছাড়া, ইউক্রেনকে দেওয়া সামরিক সহায়তার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও একটি উপায় হতে পারে এই চুক্তি।
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জেমস হিউইট সিএনএনকে বলেছেন, “খনিজ চুক্তি ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগ দেবে, যা দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা ও শান্তির ভিত্তি স্থাপন করবে। এটি আমাদের দুই দেশের সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে এবং উভয় পক্ষের উপকার হবে।
অন্যদিকে, রাশিয়াও বিরল মৃত্তিকা ধাতু এবং অন্যান্য প্রকল্প নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। রুশ ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কিরিল দিমিত্রিভ বলেছেন, “বিরল মৃত্তিকা ধাতু সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র এবং আমরা অবশ্যই রাশিয়ায় বিভিন্ন বিরল মৃত্তিকা ধাতু ও প্রকল্প নিয়ে আলোচনা শুরু করেছি।
এদিকে, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য ট্রাম্প এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ট্রাম্প বলেছেন, “আমি খুবই রেগে গিয়েছিলাম – বিরক্ত হয়েছিলাম – যখন পুতিন জেলেনস্কির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব গত সপ্তাহে ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাম্পের ধৈর্য এখন ফুরিয়ে আসছে। তিনি (স্টাব) প্রস্তাব করেন, এপ্রিল মাসের ২০ তারিখের মধ্যে শর্ত ছাড়াই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা যেতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন