মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইতিহাসকে নতুনভাবে লেখার এক চেষ্টা!
ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশন, যা আমেরিকার ২১টি প্রধান জাতীয় জাদুঘরের একটি সংগ্রহশালা, সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি নির্বাহী আদেশের শিকার হয়েছে। এই আদেশের মূল উদ্দেশ্য হলো, জাদুঘরগুলোতে থাকা “বিকৃত বর্ণনা” দূর করা।
ট্রাম্পের মতে, এখানে এমন কিছু বিষয় উপস্থাপন করা হচ্ছে যা “জাতিগত বিভাজন”-এর জন্ম দেয়। এই নির্দেশের মাধ্যমে, স্মিথসোনিয়ানের উপর “একটি বিভাজন সৃষ্টিকারী, জাতি-কেন্দ্রিক আদর্শ”-এর প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস নতুন করে লেখার একটি প্রচেষ্টা চলছে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ আফ্রিকান আমেরিকান হিস্টরি অ্যান্ড কালচার এবং আমেরিকান আর্ট মিউজিয়ামের “শেপ অফ পাওয়ার: স্টোরিজ অফ রেস অ্যান্ড আমেরিকান স্কাল্পচার” শীর্ষক একটি প্রদর্শনী। উল্লেখ্য, স্মিথসোনিয়ানের অন্তর্ভুক্ত আমেরিকান উইমেন’স হিস্টরি মিউজিয়ামও এই আদেশের আওতায় পড়েছে।
আফ্রিকান আমেরিকান হিস্টরি মিউজিয়ামে প্রবেশ করলে দর্শকরা এক ভিন্ন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। এখানে, দাসপ্রথা থেকে শুরু করে কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর সংগ্রামের ইতিহাস বস্তুনিষ্ঠভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
এই জাদুঘরে আসা দর্শনার্থীরা একটি ভিন্ন ধারার ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত হন, যা মূলধারার ইতিহাসে সাধারণত অনুপস্থিত থাকে। এখানে, আটলান্টিক দাস বাণিজ্যের সময় জাহাজে ব্যবহৃত লোহার একটি অংশ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
স্মিথসোনিয়ানের বর্তমান পরিচালক, লনি বান্চ মনে করেন, ইতিহাস হলো এমন একটি বিষয় যা আমাদের বিভাজনগুলো বুঝতে সাহায্য করে। তিনি মনে করেন, এই বিভাজনগুলো থেকেই আমাদের শেখা এবং উন্নতির সুযোগ তৈরি হয়।
কিন্তু ট্রাম্পের এই নির্বাহী আদেশ ইতিহাসের সেই গভীরতাকে অস্বীকার করে, যেখানে তিনি কেবল “স্বাধীনতা, ব্যক্তি অধিকার, এবং মানব সুখ”-এর কথা উল্লেখ করেছেন।
অন্যদিকে, আমেরিকান আর্ট মিউজিয়ামের “শেপ অফ পাওয়ার” প্রদর্শনীতে জাতিগত বিভাজনকে একটি সামাজিক construct হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। প্রদর্শনীতে দেখানো হয়েছে, কীভাবে বিভিন্ন সময়ে এই বিভাজন তৈরি হয়েছে এবং ভাস্কর্যের মাধ্যমে তা আরও শক্তিশালী হয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ হাঙ্গেরির ভিক্টর অরবানের মতো নেতাদের নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, যেখানে স্কুলের পাঠ্যক্রম পরিবর্তন করে দেশকে মহিমান্বিত করা হয়েছে। এছাড়াও, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সরকারও ভিন্ন মতাবলম্বীদের কণ্ঠরোধ করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে।
এমতাবস্থায়, স্মিথসোনিয়ান কর্তৃপক্ষের সামনে দুটি পথ খোলা: হয় ট্রাম্পের এই নির্দেশ মানতে হবে, অথবা এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান